1. imran.vusc@gmail.com : প্রিয়আলো ডেস্ক : প্রিয়আলো ডেস্ক
  2. m.editor.priyoalo@gmail.com : Farhadul Islam : Farhadul Islam
  3. priyoalo@gmail.com : প্রিয়আলো ডেস্ক :
  4. imran.vus@gmail.com : Sabana Akter : Sabana Akter
হৃদয় বিদারক! - প্রিয় আলো

হৃদয় বিদারক!

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
  • ২৫৯
91

বাঁ থেকে- তিন সন্তানের ফুফু, মা ও বাবা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হলো কুষ্টিয়ার আদালত প্রাঙ্গণে। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কারণে সন্তান কার হেফাজতে থাকবে এই নিয়ে আদালতের রায়ের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে উপস্থিত সকলের চোখ।

এই দম্পতির তিন সন্তান মায়ের হেফাজতে কোনোভাবেই থাকতে চাইছিলেন না। মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে তাই বার বছরের শিশু সোহা আদালতের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বাবার কাছে থাকার জন্য আকুতি জানাচ্ছিল।

সোহার বক্তব্য ছিল, ‘মায়ের হেফাজতে দিলে আমরা আত্মহত্যা করবো। মা খারাপ, সে কোন দিনই আমাদেরকে সন্তানের পরিচয়ে মানুষ করতে পারবে না। আমাদের তিন ভাই-বোনকে কোন দিনই সে আপন করে নিতে পারবে না।,

সন্তানদের এমন আহাজারিতে বিকেলে পুনরায় আদালত বসানো হয়। আদালত দীর্ঘ সময় মা-বাবা আর সন্তানদের উপস্থিতিতে আরেক দফা রায় ঘোষণা করা হয়। বাদী-বিবাদীর সম্মতিতে দুই বছর ৭ মাসের সন্তান ফারাবীকে তার মায়ের হেফাজতে দিয়ে বাকী দুই সন্তান ১২ বছরের সোহা আর ৭ বছরের তাহশীদকে বাবার হেফাজতে থাকার আদেশ দেন।

তবে এই আদেশেও খুশি হতে পারেনি তিন সন্তান। রায় শোনার পর তিন শিশু আদালত কক্ষেই পুনরায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এ সময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। আদালতের বিচারক এবং অন্যান্য কর্মচারীরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।

পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মা ছোট সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন আর অন্য দুই সন্তান তাদের বাপের সাথে ফিরে যায়।

মঙ্গলবার বিকেলে বিদারক ঘটনাটি ঘটে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে।

জানা যায়, ২০০৩ সালের ৪ মে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়া গ্রামের তৌহিদুল ইসলাম তারিকের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার থানাপাড়া এলাকার সানজিদার বিয়ে হয়।

পারিবারিক নানা অশান্তির কারণে দীর্ঘ ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ ঘটে ২০১৬ সালের ২১ আগষ্ট। এর আগেই স্ত্রী সানজিদা ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর শ্বশুর বাড়ির কাউকে না জানিয়ে সন্তানদের রেখেই বাবার বাড়ি চলে যায়।

এ অবস্থায় তিন সন্তানকে নিয়ে বাবা তারিক নিজ বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। আর স্ত্রী সানজিদা পিত্রালয়েই বসবাস শুরু করে। সামাজিকভাবে তাদের দাম্পত্যের কলহ মেটানোর বহু চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এদিকে স্ত্রী সানজিদা গত বছরের ১৬ মার্চ নারী নির্যাতন আইনে কুষ্টিয়ার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এরই মাঝে সানজিদা নাবালক সন্তানদের নিজ হেফাজতে ফিরে পেতে আদালতে আরো একটি আবেদন জানান।

মঙ্গলবার দুপুরে শুনানী শেষে কুষ্টিয়ার নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক সীমা শারমিন তিন সন্তানকে বাবার হেফাজত থেকে মায়ের হেফাজতে দিতে নির্দেশ দেন। বিচারকের এমন আদেশের পর তিন শিশুর কান্নায় আদালতের পরিবেশ মুহুর্তের মধ্যে পাল্টে যায়। তাদের কান্না আর আহাজারিতে পুরো আদালত এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। শিশুদের আর্তনাদ আর কান্নায় আদালতে উপস্থিত সকলের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।

আদেশের পর পুলিশ শিশুদের মায়ের হেফাজতে দিতে গেলে তারা তিন ভাই বোনসহ পিতাকে জড়িয়ে আদালতের চেয়ার আকড়িয়ে ধরে বসে পড়ে। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও যেন নির্বাক হয়ে পড়েন। বড় সন্তান আদিবা আনজুম সোহা চিৎকার দিয়ে তাদের পিতার নিকট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আদালতের নিকট আবেদন জানান।

এ সময় সোহা এবং অন্য ভাই আবুজর গীফারী তাওশী বলে, ‘আমরা শিশু, আমাদের পিতা আমাদের লালন পালন করেছেন। মাকে আমরা চিনি না। আমাদের জোর করে মায়ের কাছে দিতে গেলে আত্মহত্যা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না।’ এই বলে তারা আদালতে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। সন্তানদের পিতা তারিকুলও বেঞ্চে বসে সন্তানদের জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।

এই পরিবেশে বিকেলে দু’পক্ষের উপস্থিতিতে পুনরায় আদালত বসানো হয়। আদালতের বিচারক পৃথক পৃথকভাবে সন্তান এবং পিতা ও মাতার বক্তব্য শোনেন।

দীর্ঘসময় উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং উভয় পক্ষের সম্মতিতে ছোট ছেলে ওয়াসি হাসান ফারাবীকে মায়ের কাছে এবং অন্য দুই সন্তানকে পিতার হেফাজতে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এ রায়েও সন্তোষ হতে পারেননি সন্তানেরা। রায় শুনে সন্তানেরা আবারো হাউমাউ করে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। তখন পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থায় উভয় পক্ষকে আদালত চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলে কাঁদতে কাঁদতেই সকলেই আদালত ত্যাগ করে।

জানা যায়, ছোট ছেলে ফারাবী জম্মের পর থেকেই ফুফুর লালন পালনে বড় হয়ে উঠে। ফারাবী জম্মের পর থেকে গর্ভধারীনি মাকে চেনে না। ফুফুকেই মা বলে ডাকে।

ফারাবীর ফুফু বলেন, ‘আমার কোন সন্তান না থাকায় জন্মের পর থেকেই আমি ফারাবীকে দত্তক নিয়ে নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করি। ফারাবী আমাকে মা এবং আমার স্বামীকে বাবা বলেই ডাকে। আমরা স্বামী-স্ত্রী পিতা-মাতার স্নেহ দিয়েই তাকে এই আড়াই বছর পালন করেছি।’

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved priyoalo.com © 2023.
Site Customized By NewsTech.Com
x