সিরাজগঞ্জের সাংবাদিক আবদুল হাকিম ওরফে শিমুল গুলিতে নিহত হওয়ার এক বছর পূর্তি হলো আজ ৩ ফেব্রুয়ারি। দিনটি উপলক্ষে শাহজাদপুর রিপোর্টার্স ক্লাব ও প্রেসক্লাব পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মিলাদ মাহফিল, শোক র্যালি ও আলোচনা সভা।
এদিকে এক বছরেও পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি, কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন শিমুল। স্বজনদের অভিযোগ, এত দিনেও মামলার তেমন অগ্রগতি নেই।
শিমুল ছিলেন দৈনিক সমকাল–এর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর প্রতিনিধি। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌর শহরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলছিল। হামলা-ভাঙচুর চলছিল পৌর মেয়রের বাড়িতে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ঢাকায় নেওয়ার পথে শিমুলের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী নুরুননাহার খাতুন বাদী হয়ে পৌর মেয়র হালিমুল হক ওরফে মিরুসহ (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) ১৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০–২৫ জনকে আসামি করে শাহজাদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে মেয়রসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযুক্ত আসামির মধ্যে ২৯ জন জামিনে রয়েছেন। আটজন পলাতক। তবে শুধু বরখাস্ত হওয়া মেয়র মিরু জেলহাজতে আছেন।
নুরুননাহার খাতুন বলেন, ‘লোকমুখে জেনেছি, সে সময়ের মেয়র মিরুর গুলিতেই আমার স্বামী শিমুলের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এক বছর চলে গেলেও মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।’
শিমুল হত্যা মামলার আইনজীবী মো. আবুল কাশেম মিয়া বলেন, উদ্ধার হওয়া অস্ত্র দিয়েই শিমুলকে গুলি করা হয়েছিল।
তবে বরখাস্ত মেয়রের স্ত্রী লুৎফন নেসা বলেন, তাঁর স্বামী মিরু স্থানীয় একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার। শিমুলকে ওই পক্ষের লোকজনই গুলি করেছিল। এই দোষ মিরুর ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।
মিরুর লাইসেন্স করা একটি শটগান এবং তাঁর ভাই মিন্টুর একটি লাইসেন্সবিহীন পাইপগান উদ্ধার করেছিল পুলিশ। জব্দ করা অস্ত্র এবং উদ্ধার হওয়া কার্তুজ ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিক শিমুলের মাথায় বিদ্ধ (স্প্লিন্টার) সিসার বল এবং জব্দ করা গুলির সিসার বলের সাদৃশ্য রয়েছে। তবে ওজনে পার্থক্য রয়েছে। জব্দ করা শটগান ও পাইপগান থেকে গুলি ছোড়ার প্রমাণ মিলেছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া গুলির খোসাটি জব্দ করা শটগান থেকে ছোড়া হয়নি।
শিমুল হত্যা মামলার দুই আসামি সাহেব আলী ও জহির শেখ। তাঁরা সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। সাহেব আলী বলেন, ‘ঘটনার দিন সাংবাদিক শিমুল ছাড়াও আমরা চারজন গুলিবিদ্ধ হই। আমাদের শরীরে এখনো স্প্লিন্টার রয়েছে। আমাদের শরীরের স্প্লিন্টার ও শিমুলের মাথার ভেতর থেকে উদ্ধার করা স্প্লিন্টার মিলিয়ে দেখা দরকার।’ এদিকে বিষয়টি নিশ্চিত হতে গত ৩০ জানুয়ারি শাহজাদপুর আমলি আদালতে মামলার শুনানি শেষে বিচারক গুলিবিদ্ধ এই চারজনের শরীরে গুলির চিহ্ন পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিভিল সার্জনকে আদেশ দিয়েছেন।
শাহজাদপুর থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া বলেন, প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করেই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মেয়রের স্ত্রীর মামলাটিও তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
মামুনুর রশীদ