মোস্তফা কামাল ত্বহাঃ চালের দাম নাকি মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে অনেক বেশী, তাও নাকি বাংলাদেশেই! ক’দিন ধরেই বিভিন্ন টক শো তে এ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে, শুনছি। অথচ ২০০০ সালে কেরোসিন তথা জ্বালানি তেলের লিটার ছিল ১৩/- টাকা মাত্র! আর এখন ৭৫ টাকা লিটার!! সুতরাং ঐ গোঁড়া (তেল-গ্যাস , জ্বালানী সামগ্রী) ছেঁটে ফেলতে পারলে এমনিতেই সব দাম কমবে। এখন তো ১ কেজি চাল ভাঙ্গাতেই মেশিনে মনে হয় ১০/১৫ টাকা নেয়…! সুতরাং চালের দাম কমবে কীভাবে ???
ট্রেড লাইসেন্স, জমি রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট খরচ, যাতায়াত খরচ, সরকারী বিভিন্ন ফি বৃদ্ধি, অহেতুক গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, সরকারি স্থাপনা নির্মাণে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চেয়ে চড়া মূল্যে অবকাঠামো নির্মাণসহ সব কিছুর ব্যয় কমানো অনেকাংশেই সম্ভব, যদি তেল-গ্যাস , জ্বালানী সামগ্রীর দাম কমানো যায়। সুতরাং যে সরকারই আগামীতে সরকার গঠন করুক না কেন তারা নিজের স্বার্থের জন্যই কোন কিছুর দাম কমাবে না, এটা চির সত্য। সুতরাং আমার আপনার জন্য কেউ কিছু করেনি, করবেও না কেউ। যদি না নিজে করি।
এ সরকার যোগাযোগ খাতে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে সত্য, কিন্তু সে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিন্ম আয়ের মানুষ কী আজও পেরেছে শান্তিতে ট্যাক্সি ক্যাবে করে বাড়ি যেতে??? পারেনি, কারন- তথাকথিত ক্রয় ক্ষমতা বাড়লেও, ব্যয়ের সাথে তুলনা মূলক সেই অর্থে আয় বাড়েনি। বেড়েছে কী? আর মানুষ যদি অদৃশ্য এই পুঁজিবাদী যুগে খুব বেশী আয় বাড়িয়েই থাকে তবে নতুন ব্যাংকগুলো কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংক গুলো থেকে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ধার নিয়ে চলবে??? জোর যার, রাজ্য তার! এ প্রবাদের সাথেও বর্তমান সময়কাল যাচ্ছে না। এখন টাকা যার বেশী যত, রাজ্য & রাজ্যের মানুষেরা তাকে কুর্নিশ করে ততো। তাই আগে পেশী শক্তি দিয়ে যারা অস্ত্র বাজি করত, তারা কেউ টিকে নেই, তাঁদের কেউ এখন আর দিনের বেলায় মহড়া দেয় না, এখন আর আমার ঢাকা পলিটেকনিকে কেউ রাম দা, হকিস্টিক বিছানার নিচে রাখে না, এখন আর কোন এরশাদ শিকদারের জন্ম হয় না, বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়ক জসীমের ছবিতে দেখা দিনের বেলায় মা-বোনের গহনা টেনে নিয়ে দৌড় দেয়ার তেমন কেউ নেই।
তবে এখন নতুন এক বিভীষিকাময় দরবেশ বাবাদের আগমন হয়েছে জাতির সন্মুখে। তাঁদের হাতে অস্ত্র শোভা পায় না, কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা তাঁদের পকেটে, তাঁদের হাতে রাম দা নেই কিন্তু শেয়ার মার্কেটের টাকা তাঁদের হাতে। তাঁদের হাতে চাইনিজ কুড়াল কিংবা একে-৪৬, একে-৪৭, একে-৫৪, একে-৫৬, একে-৭৪ ও এম-১৬-এর মতো ভয়ঙ্কর কোন অস্ত্রও প্রদর্শন করতে হয়নি, তবুও সোনালী ব্যাংক এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রক্ষা পায়নি লুকিয়ে থাকা অদৃশ্য রাঘব বোয়ালদের রাক্ষুসে থাবা থেকে। খোঁজ নিয়ে কিংবা তদন্তে যদি অগ্রগতি হয়, তবে দেখা যাবে ঐ দুষ্কৃতিকারীদের কেউই অস্ত্রের মুখে নয় বরং টাকা ঢেলে টাকার জন্য এসব করে সব লুটেপুটে খেয়েছেন। অতএব এ থেকেই প্রমাণিত হয়- জোর নয় টাকার জোরই আসল কথা। আর অস্ত্রবাজরা সময়ের স্রোতে হারিয়ে যায় শতাব্দীর অতল গহ্বরে। সুতরাং আসুন এই বিগড়ে যাওয়া সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে যে যার মতো করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করি। আর প্রত্যেক সরকারের আমলেই নিজের লক্ষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সাথে পাশের ভাইটিকে ভাল রাখার মানসিকতাই হোক আমাদের প্রত্যয়।অতএব, জাতি হিসেবে সভ্য এবং সামাজিক না হলে কোন সরকারের পক্ষেই কোন একটি জাতিকে সেরা ফলাফল দেয়া সম্ভব না।তাই সরকারের দোষ দিয়ে লাভ কি বলুন?
বিরোধী দল মাঠে নামলে পাবলিক ই পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে, আবার সরকার বেকায়দায় পড়লে ঐ পাবলিকই বলে হরতাল দে, ক্ষমতা উলটাইয়া দে!!! এ অবস্থায় আমাদেরকে জাতীয়ভাবে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের কি. গার্ডেনে না পাঠিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাটা নিজস্ব আদলে গড়া পাঠ্যবই কিংবা ধর্মীয় পাঠদানের মাধ্যমে সৎ এবং নিষ্ঠার সাথে গড়ে তুলতে হবে। আর ভীনদেশী সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী আকাশ মিডিয়াকে চির দিনের জন্য চির বিদায় দিতে হবে। এসব ছোট ছোট কিন্তু সুদূর প্রসারী বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া গেলে প্রত্যেকের মাঝেই সৃষ্টি হবে দেশপ্রেমের গভীর চেতনা। তখন সব ধরনের জোর থেকে নিজেকে রক্ষা করার মধ্য দিয়ে সুন্দর এবং কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে সবাই সুফল পাবে।
সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সবাইকে স্বচ্ছল করা যাবে বলে জিনিসের দাম বাড়লেও আয়ও বাড়বে সমহারে, যা এখন সমহারে বাড়ছে না। তাই ২০০০ সালের একজন দিনমজুর তখন যে মানের লুঙ্গি যে দামে কিনত, এখনও সেই মানেরই লুঙ্গি তাকে কিনতে হয়! কারন সমহারে আয় বেড়েছে সত্যি কিন্তু ব্যয়ের অনুপাতে ব্যয়ের সমান্তরালে কোন মানুষের আয়ই বাড়েনি।
তাই আমরা সরকারের কাছে যা চাই, ঠিক সেই চাওয়াটাই আপনার পরিবার আপনার কাছে চায়।মানুষ সভ্য হলে রাজনীতিও সভ্য হতে বাধ্য। একটি হিংসা বিদ্বেষ এবং প্রতিহিংসা মুক্ত সুস্থ মনের মানুষের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ দেখতে চাই। অতএব আসুন সবাই সন্মিলিতভাবে নিজের চারপাশকে নিজের অনাগত বংশধরদের জন্য সভ্য করে সাজাই।
নিজেই সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই, আর রাজনীতি চলুক তার গতিতে, আর বলি আমরা সবাই সরকার।