রাজধানীর শ্যামলীতে ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’- এর মালিক গোলাম সারোয়ারের নির্দেশেই যমজ শিশুদের চিকিৎসা বন্ধ করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে তাদের বাবা-মা দুই শিশুকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যান। পথে আহমেদের মৃত্যু হয়।
এই হাসপাতলে ঠিকমতো চিকিৎসা হলে হয়তো ছোট্ট শিশুটিকে এভাবে জীবন দিতে হতো না বলে জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘‘শুক্রবার সকালে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ‘আমার বাংলাদেশ হাসাপাতাল’-এর মালিক মো. গোলাম সরোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ভুক্তভোগী পরিবার মোহাম্মদপুর থানায় ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’-এর মালিক ও পরিচালককে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। যার নম্বর ৪২, ধারা ৩০৪-ক পেনাল কোড।
‘‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’-এ রোগী ভর্তির জন্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালাল নিয়োগ করা আছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওই হাসপাতালে ২ জানুয়ারি যমজ দুই শিশুকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয় তাদের বাবা-মাকে। অন্যথায় চিকিৎসা করা হবে না বলে জানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। শিশুদুটির পরিবার ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। তবে অতিরিক্ত আরও টাকা দেওয়ার জন্য চাপ অব্যাহত রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে টাকা দিতে না পারায় চিকিৎসা বন্ধ রাখা হয়। এক পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যমজ দুই সন্তানসহ ভূক্তভোগীদের বের করে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে।”
খন্দকার মঈন আরও বলেন, ‘‘সরোয়ার দীর্ঘ ২০-২২ বছর ধরে প্রায় ছয়টি (রাজারবাগ, বাসাবো, মুগদা, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায়) বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এক বছর আগে শ্যামলীতে হাসপাতাল খুলে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে এই হাসপাতালের সঙ্গে দালাল সিন্ডিকেট জড়িত করেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফুসলিয়ে এ হাসপাতালে নিয়ে আসা হতো।
‘হাসপাতাল পরিচালনার বিধি মোতাবেক সার্বক্ষণিক তিন জন চিকিৎসক ডিউটিরত থাকার কথা থাকলেও সার্বক্ষণিক ডিউটিরত থাকতেন একজন। দুটি আইসিইউসহ ৩০টি বেড থাকার কথা। তবে তার হাসপাতালে ছয়টি আইসিইউ রয়েছে। তার মধ্যে ভেন্টিলেটর রয়েছে দুটি। ৯টি এনআইসিইউ থাকলেও ইনকিউবেটর ছিল একটি। সাধারণ বেড রয়েছে ১৫টি। মূলত আইসিইউ কেন্দ্রিক ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করে অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছেন তিনি।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ না করায় চিকিৎসাধীন যমজ শিশুদের জোর করে বের করে দেওয়ায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। অপর জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। নির্মম ও অমানবিক এ ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় সরোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’