দৃশ্যটি এখন উপজেলার সবগুলো গ্রামে। বিশটাকা দিয়ে একটি টিকিট কিনেই পাওয়া যাবে একশ সিসি মোটরসাইকেল। জব্বর ব্যাপার। আরো রয়েছে আকর্ষণীয় পঞ্চাশটি পুরস্কার। অটোরিক্সা নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। লোকজন লাইন দিয়ে লটারির টিকিট কাটছেন।
কৃষক, দোকানি, অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক, স্কুলগামী বালক সবাই কিনছে লটারি টিকিট। যদি লাইগা যায়। বিক্রয়কর্মীর কাছে ভীড় কমে না মাঝরাত অবধি। মাঝরাতে লটারি ড্র। দৈনিক আলোর ভুবন রাফেল ড্র। মেলা বসেছে উপজেলার মাঝখানে। এক হকারসদৃশ উপস্থাপক খিঁচিয়ে খিঁচিয়ে রস বের করছে শব্দে শব্দে। দর্শক হাসছে। লটারি হবে এখন। মাঝরাতে। ঘুমায়নি সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করা শ্রমিক নাদের আলী। ঘুমায়নি রহিমুদ্দির বউ। ডিমবেচা টাকায় লটারি ধরেছেন তিনি। ঘুম চোখে চেয়ে আছে টিভির দিকে। লোকাল কেবল নেটওয়ার্কের সরাসরি পরিবেশনায়। যদি লাইগা যায়। লক্ষ লক্ষ নাদের আলী প্রতিদিন টিকিট ক্রয় করছে। উৎসাহিত হচ্ছে শরৎচন্দ্রের পল্লিসমাজ।
ঘটনাটি নওগাঁ জেলার প্রতিটি উপজেলার। মেলার নাম করে সর্বত্র চলছে রাফেল ড্র। মেলায় আছে অশ্লীল নৃত্য, সোজা কথায় বলতে গেলে নগ্ন নৃত্য। ভ্যারাইটি শো নামে ব্যাপক পরিচয় পেয়েছে এই নৃত্য। আর জেলাগুলোর কথা নাই বললাম। এই হলো একটা উন্নত হতে যাওয়া জাতির মানসচিত্র।
শেষটা আরো ভয়ঙ্কর। সেদিন গ্রামে গিয়ে দেখলাম। সেদ্ধ ডিম বিক্রি হচ্ছে লটারিতে। ডিমের দাম আট টাকা। চারজন ব্যক্তি দুইটাকা করে টিকিট ক্রয় করছে। লটারিতে একজন পাচ্ছে ডিম। অর্থাৎ দুই টাকায় পাচ্ছে সেদ্ধ ডিম। হু হু করে বাড়ছে ক্রেতা। যাদের বেশিরভাগই শিশু। এভাবেই চলছে পল্লিসমাজ।
কোথাও কেউ নেই। এই লটারি বিশ্বাসী জাতিকে আলো দেখাবে কে? প্রশ্ন জাগে মনে, প্রশাসনের অনুমতি ও পাহারায় সব কিছুই কি চলবে আমার বাংলাদেশে? সবকিছুই হালাল?