স্টাফ রিপোর্টার: বগুরা থেকে বরিশালের গৌরনদী এসে স্বামীর হাতে নিহত গৃহবধূ নাজনিন আক্তারের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় হরহর গ্রামের একটি কৃষি জমি থেকে বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করেছে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ঘাতক স্বামী সাকিবের দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছিল, লাশ হরহর গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসার সেপটিক ট্যাংকে ফেলা হয়েছে। পুলিশ সেফটিক ট্যাংক থেকে মঙ্গলবার গৃহবধূর শরীরের চামড়া, পায়ের আয়ুলের নখ এবং ওড়নাসহ কিছু আলামতও উদ্ধার করেছিল। কিন্ত লাশ মিলল একদিন পরে একই গ্রামের একটি কৃষিজমিতে। ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং হত্যার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত।
জানা গেছে, বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামের আবদুল করিম হাওলাদারের ছেলে সাকিব হাওলাদার (২১) বগুরা সেনানিবাসে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে বগুরা সদর থানার সাবগ্রাম এলাকার লতিফ প্রমানিকের মেয়ে নাজনিন আক্তারের সঙ্গে গেল বছরের ১ অক্টোবর প্রেম করে বিয়ে হয়। গত ২৪ মে ঘাতক স্বামী বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে এসে জনৈক ছালাউদ্দিন বেপারির ভাড়াটিয়া বাড়িতে আসে এবং এখানে বসে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে।
সাকিবের বাবা মাসহ পরিবারের সদস্যরা ওই ভাড়াটিয়া বাড়িতে বসবাস করত। ঘটনার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা পলাতক। গত ২৫ মে আবার সাকিব কর্মস্থলে যোগ দেয়। এদিকে নিহত গৃহবধূর পরিবার তাদের মেয়ের সন্ধান না পেয়ে বগুরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
ডায়েরির সূত্র ধরে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ সাকিবকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করেন। এরপর নিহত গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের জন্য বগুড়া থেকে গত বুধবার সকালে গৌরনদী আসেন।
গৌরনদী মডেল থানার সহযোগিতায় লাশ উদ্ধারে নামে পুলিশ। ঘাতক সাকিব হত্যার কথা স্বীকার করে বলেছে, নাজনিনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ ভাড়াটিয়া বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখা হয়েছে। পুলিশ সেপটিক ট্যাংক থেকে নাজমিনের ব্যবহৃত ওড়না, শরীরের কাটা চামড়া ও নখ উদ্ধার করেন। এর একদিন পরে আজ বুধবার একই গ্রামের একটি কৃষি জমি থেকে নাজনিনের বস্তাবন্দি বিকৃত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, ফেসবুকে পরিচয় গোপন করে কলেজছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করে সাকিব। এরপর গোপনে বিয়ে করেন দুজন। কলেজছাত্রী নাজনীনকে (১৯) বিয়ের করার সময়ও সাকিব তার বাবার পেশা ভ্যানচালক বিষয়টি লুকায়। বিয়ের পর সবকিছু জেনে নাজনীন বিষয়টি গোপন করার কারণ জানতে চায়। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে নাজনীন তার স্বামী সাকিবকে ‘ভিক্ষুকের ছেলে’ বলে গালি দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন সাকিব।
গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক মো. আফজাল হোসেন জানান, একজন নারীর বস্তাবন্দি লাশ আমরা উদ্ধার করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে লাশটি নিহত গৃহবধূ নাজনিনের। তবে তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে তারা আসলে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।