মিজানুর রহমান :অতিরিক্ত ঘুমের কারণে আপনি অন্ধও হয়ে যেতে পারেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই জানিয়েছে একদল চক্ষু গবেষক। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অন্ধত্বের প্রধান কারণ হিসেবে গবেষণায় এমন আশ্চর্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
গবেষকরা বলছেন, যারা নিয়মিত ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চোখের জ্যোতি কমে যাবার প্রবণতা বেশি। মূলত এই সমস্যাটা ৬০ বছর বয়সের পর থেকে বেশি হয়।
পরিমানের তুলনায় বেশি ঘুমানোর কারণে চোখে ব্যাথা কিংবা চোখে বিভিন্ন উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
নর্দান ক্যালিফোর্নিয়ার রেটিনা ভিট্রিয়াস অ্যাসোসিয়েটস-এর ডাক্তার রাহুল এন খুরানা প্রায় ১০০০ জনের ওপর গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তির আলাদা আলাদা ঘুমের সময়ের ওপর ভিত্তি করে চোখের দৃষ্টি ক্ষয়িষ্ণুতার বিভিন্ন বর্ণনা দিয়েছেন, যার মধ্যে দেখা গেছে ৮ ঘণ্টার বেশি যারা ঘুমায় তাদের চোখের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে তত বেশি হ্রাস পায়।
এই ধরনের বিভিন্ন গবেষণার পর ডাক্তাররা বলছেন, অতিরিক্ত ঘুমও আপনার ভবিষ্যত অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। কারণ অতিরিক্ত ঘুমের কারণে চোখে গ্লাউকোমা নামক একটি রোগ হয়। চোখের অক্ষিস্নেহ নামে একটা তরল পদার্থ সঠিকভাবে চলাচলে ব্যর্থ হবার ফলে অপটিক নার্ভের ওপর চাপ পড়ে এবং এই নার্ভের তন্তুগুলো আস্তে আস্তে মরে যেতে থাকে এবং তখনই গ্লাউকোমা রোগটি দেখা দেয়। মূলত বেশি ঘুমানোর কারণে গ্লাউকোমা রোগটি বেশি দেখা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের মতো ভয়ংকর বিপদ হতে পারে মানবজীবনে।
তবে শুধু বেশি ঘুম নয়, ঘুমের মধ্যে চোখের ওপর কিছু চাপা দিয়ে ঘুমালেও ঘটাতে পারে গ্লাউকোমা।
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায়, চোখের ওপর বালিশ চাপের প্রভাব পরীক্ষা করে বলা হয়েছে, যারা মুখে বালিশচাপা দিয়ে ঘুমায় তাদেরও গ্লাউকোমা হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষক ড. অ্যালিসন বলেন, ‘ঘুমোবার পর চোখের ওপর চাপ বাড়লে অক্ষিস্নেহের বহিঃপ্রবাহ ব্লক পড়ে যার ফলে চোখের বিভিন্ন তন্তুর বিকৃতি স্বাভাবিক। যার জন্য গ্লাউকোমা হতে পারে।’
ফোকাস ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা, লেজার চক্ষুসার্জন ডা. এলেম্বে বলেন, ‘গ্লাউকোমা একটি নীরব ঘাতক। যখন এটি চোখে বাসা বাধে তখন ক্ষতিগ্রস্থদের প্রায় সবাই যতক্ষণ না তারা ইতিমধ্যে তাদের দৃষ্টি হারাতে শুরু করে, ততক্ষণ তারা জানে না নীরবে রোগটি তার কেমন ক্ষতি করে যাচ্ছে’ তাই তিনি চল্লিশউর্ধ্ব সকলকে দুই বছরে একবার হলেও চোখে গ্লাউকোমা আছে কিনা পরিক্ষা করাতে বলেন।
তবে ঠিকমতো খেয়াল রাখলেই চোখকে এই বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। এমনটাই আশাবাদ গবেষকদের। তাই চোখের যত্ন নিন এবং অতিরিক্ত ঘুমানোর ব্যাপারে সচেতন হোন।