এম.কে.ত্বহা: বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) সরাসরি যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল শুরুর প্রটোকল চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে চলতি মাসে। এ লক্ষ্যে আগামী ২৯ ও ৩০ মার্চ ঢাকায় কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে চুক্তিতে সই করা চারটি দেশ তাদের প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচল প্রটোকল চূড়ান্তের পর তা দ্রুততম সময়ে চার দেশের সরকার অনুমোদন দেবে। এরপর প্রটোকল সই করা হবে। তা পুনরায় চার দেশের সরকার পর্যায়ে অনুসমর্থনের পর চার দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচল শুরু হবে।
জানা গেছে, চুক্তিটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের নভেম্বরে যাত্রীবাহী মোটরযানের পরীক্ষামূলক চলাচলের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। এ জন্য গ্রিনলাইন পরিবহন কোম্পানিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে সদস্য তিন দেশের (ভারত, নেপাল ও ভুটান) অনুমোদন না পাওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে পণ্যবাহী রুট নির্ধারণে বাংলাদেশের মেসার্স নজরুল ট্রেডার্সকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পণ্যবাহী মোটরযানের রুট চূড়ান্তেও ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলক চলাচলের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পরে তা স্থগিত করা হয়েছে। বৈঠকে এসব প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
এ ছাড়া ২০১৫ সালের জুনে বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্ট সইয়ের পর চার দেশের পরিবহনমন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, ডিসেম্বরের মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) সরাসরি যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল শুরু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
তবে নেপাল এখনো পুরোপুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করেনি। আর সদস্য দেশ ভুটানের সংসদে চুক্তিটি এখনো অনুমোদন হয়নি।
এই অবস্থায় ঢাকা বৈঠকে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি ও প্রস্তাব দেখে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৬ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকও করেন। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলাই মাস নাগাদ বিবিআইএনের আওতায় সরাসরি যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল শুরু করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
এদিকে বিবিআইএন রুটে চলাচলকারী গাড়ির গতিবিধির ওপর নজর রাখতে ভেহিকেল ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালুতে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
এ বিষয়ে সংস্থাটির বাংলাদেশি মুখপাত্র গোবিন্দ বার রাইজিংবিডিকে বলেন, চার দেশে অনলাইন ভেহিকেল ট্র্যাকিং চালুর বিষয়ে এডিবি এরই মধ্যে কর্মপরিকল্পনা সম্পন্ন করেছে।
তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষ নাগাদ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারে সংস্থাটি।
জানা গেছে, বিবিআইএন রুটে ভেহিকেল ট্র্যাকিং চালুর বিষয়ে গত ডিসেম্বরে কলকাতায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা আনু্ষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। ঢাকা বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কর্মপ্রক্রিয়া জানা যাবে।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চার দেশের মধ্যে মোটরযান চলাচল শুরু করার ক্ষেত্রে নেপাল ও ভুটানের জন্য দেরি হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ও ভারত প্রস্তুত রয়েছে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিবিআইএন নোডাল অফিসার্স কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে চার দেশের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচলে প্রটোকলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়।
এরপর পুনরায় ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নোডাল অফিসার্স কমিটির বৈঠকে বসার কথা ছিল। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও গ্রহণ করে। তবে ফেব্রুয়ারিতে সার্ক পরিবহনমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের কারণে বিবিআইএন বৈঠক বাতিল করা হয়। যা চলতি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।