1. imran.vusc@gmail.com : প্রিয়আলো ডেস্ক : প্রিয়আলো ডেস্ক
  2. m.editor.priyoalo@gmail.com : Farhadul Islam : Farhadul Islam
  3. priyoalo@gmail.com : প্রিয়আলো ডেস্ক :
  4. imran.vus@gmail.com : Sabana Akter : Sabana Akter
বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেটে হঠাৎ কেন এই বৈরিতা? - প্রিয় আলো

বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেটে হঠাৎ কেন এই বৈরিতা?

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬
  • ১৮৩
199542 1

ক্রীড়া ডেস্কঃ  বুধবার ওয়ার্ল্ড টি-টোয়ে199542_1ন্টিতে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে ভারতের।

গত এক দেড় বছরে এই দুই দেশের ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টা একটা সম্পূর্ণ আলাদা উচ্চতায় পৌঁছে গেছে – যাতে ইন্ধন জুগিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।

দুই দলের ক্রিকেটাররা যদিও বলছেন, এই বিষয়গুলো তাদের খেলায় মোটেই ছাপ ফেলে না, কিন্তু ঘটনা হলো ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচকে ঘিরে ইদানিং যে পরিমাণ উত্তেজনা আর মাতামাতি দেখা যাচ্ছে তা যেন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেরই একটা ছোট সংস্করণ!

ক্রিকেটের বাইরেও তাতে ছায়া ফেলছে নানা ষড়যন্ত্রের জল্পনা কিংবা ইতিহাসের বঞ্চনা।

কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচে কেন এই নতুন মাত্রাটা যোগ হলো ?

বেঙ্গালুরুর আইটি শিল্পে কাজ করেন, এমন বেশ কিছু বাঙালি ভারতীয় যুবক বুধবারের ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের টিকিট তুলতে মঙ্গলবার বিকেলে স্টেডিয়ামের কাউন্টারে এসেছিলেন।

তারা কেউ বলছিলেন, ‘মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে বাংলাদেশ এখন মাঠের বাইরের বিষয় নিয়ে বেশি লড়াই করছে। এখন আমরা পাকিস্তানের চেয়েও আগে বাংলাদেশকে হারাতে চাই – পাকিস্তানকে তো নিয়মিত হারাচ্ছি, এখন এদেরও হারাব।’

পাশ থেকে তার বন্ধুরা যোগ করেন, ‘তাসকিন-সানি নিষিদ্ধ হয়েছে তার জন্যও বাংলাদেশ সোশ্যাল মিডিয়াতে ভারতীয় বোর্ডকে গালাগাল করছে। আরে, ওরা কী এমন বোলার যে ওদের নিষিদ্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্র করতে হবে।’

পাকিস্তানেরও আগে ভারত এখন বাংলাদেশকে হারাতে চায় – ভারতীয় সমর্থকদের এই ধরনের ভাবনার পেছনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যঙ্গবিদ্রূপ, ভারতের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব এগুলোকেই কারণ হিসেবে খাড়া করা হচ্ছে।

উল্টোদিকে বেঙ্গালুরুতে আসা হাতে গোনা বাংলাদেশি সমর্থকদের মনেও বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই ভারত তাদের দাবিয়ে রাখতে চাইছে।

ঢাকা থেকে প্রায় দেড় হাজার মাইল দূরের বেঙ্গালুরুতে এসে ফারহান আহমেদ বলছিলেন, ‘ভারত কিন্তু কোনোদিন আমাদের সাপোর্ট করেনি। এত বছর হলো আমরা টেস্ট খেলছি, কোনোদিন ওদের দেশে খেলতে ডাকেনি। বিশ্বকাপে বা অন্য যে কোনো টুর্নামেন্টে আমাদের সব সময় যেভাবে চাপে ফেলা হয় – দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলো কিন্তু ভারতেরই কারসাজি!’

এমন কী, তাসকিন-সানিকে যেভাবে বিশ্বকাপ চলাকালীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাতেও ভারতের হাত দেখছেন ফারহান ও তার বন্ধুরা।

তাদের প্রশ্ন, ‘বিশ্বকাপের পরে এটা করলে কী এমন ক্ষতি হতো? আসলে আমাদের দলটা ভারতের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে বলেই এভাবে দমাতে চাইছে!’

এটা ঠিকই যে অ্যাডিলেডে গত বছর বিশ্বকাপে দু’দেশের ম্যাচের সময় থেকেই ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট দ্বন্দ্বটা অন্য মাত্রা নিয়েছে।

ওই ম্যাচে আইসিসি-র ইশারায় ভারতকে জেতানো হয়েছে, রোহিত শর্মার ন্যায্য আউট দেওয়া হয়নি – এই অভিযোগে ইস্তফাও দিয়েছিলেন আইসিসি প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশের মোস্তাফা কামাল।

তিক্ততা তখন থেকে এতটুকু কমেনি, বরং বেড়েছে।

মাঠে ততটা না-হলেও মাঠের বাইরে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় তো তার ছাপ পড়ছেই। ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ বোলার আশিস নেহরা বিবিসির প্রশ্নের জবাবে অবশ্য হেসে বললেন, এগুলো তার ওপর অন্তত কোনো প্রভাব ফেলে না।

নেহরার কথায়, ‘আমি পুরনো আমলের লোক, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম কিছুই করি না – সেই মান্ধাতার আমলের নোকিয়াই ব্যবহার করি। কাজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কী বলল তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। তবে আমার যেটা মনে হয়, এসব চর্চা হচ্ছে কারণ বাংলাদেশ ইদানিং খুব ভাল খেলছে, মুস্তাফিজুর-তামিমের মতো তারকারা উঠে আসছে, ওরা আইপিএল-বিগ ব্যাশেও খেলছে। এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুধু নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের জন্যও দারুণ ব্যাপার।’

বাংলাদেশের অনেক পলিটিক্যাল এলিটও বিশ্বাস করেন যে ভারত একটা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত

প্রায় অবিকল একই ভঙ্গীতে বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও দাবি করলেন – সোশ্যাল মিডিয়াতে কে কী বলল তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।

সাকিবের বক্তব্য, ‘আমরা তো নয়ই, আমি নিশ্চিত ভারতের ক্রিকেটাররাও এগুলো নিয়ে ভাবে না।’

দুই দলের ক্রিকেটাররা বিষয়টাকে যতই খাটো করার চেষ্টা করুন, গত এক-দেড় বছরে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে রেষারেষিটা অত্যন্ত বেড়ে গেছে।

ভারত-পাকিস্তানের মতো না-হলেও এই ম্যাচটা যে আর ভারত-শ্রীলঙ্কার মতো নিরামিষ ম্যাচ নেই, সেটা সবাই মানছেন।

ক্রিকেট গবেষক ও উইজডেন ইন্ডিয়ার সম্পাদক সাম্য দাশগুপ্ত বলছিলেন, ‘বাংলাদেশে গেলে সব সময়ই অসম্ভব ভালোবাসা পাই। কিন্তু এটাও ঠিক তাদের মধ্যে একটা ভিক্টিমহুড কাজ করে – অর্থাৎ আমরা বঞ্চিত বা নির্যাতিত এটা দেখানোর চেষ্টাও থাকে। ঢাকায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হলে ষাট থেকে সত্তরভাগ লোক যে পাকিস্তানকে সমর্থন করেন তাতেও কোনও ভুল নেই।’

‘এর কারণ আমি সঠিক জানি না – হতে পারে ধর্মীয়, হতে পারে বাংলাদেশে অনেকে মনে করেন একাত্তরের পর ভারত সেভাবে তাদের আর সাহায্য করেনি – কিংবা হতে পারে ভারতের বড় ভাইসুলভ খবরদারিকে তারা পছন্দ করেন না। রোহিত শর্মাকে আউট দিলেই বিশ্বকাপে ভারত হেরে যেত তা হয়তো নয় – কিন্তু সব মিলিয়ে ব্যাপারটা বেশ জটিল আকার নিযেছে তাতে সন্দেহ নেই।’

তবে ভারত একটা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, সেটা শুধু বাংলাদেশের আম দর্শক নন, পলিটিক্যাল এলিটরাও অনেকেই বিশ্বাস করেন।

বেঙ্গালুরুর মাঠে দলের খেলা দেখতে আসা বাংলাদেশের এমপি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেলও এই দলেই পড়েন।

টঙ্গীর এই এমপি বলছিলেন, ‘ভারত আগে ভাবত যে এরা ছোট টিম – কোনদিন আমাদের হারাতে পারবে না। কিন্তু যখন থেকে আমরা ওদের প্রায় নিয়মিত হারাতে শুরু করেছি, তখন থেকে এরা বুঝেছে যে এরা মোটেই ফেল না না!’

‘আর ঠিক তখন থেকেই কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্তও শুরু হয়েছে। বিশ্বকাপে ইচ্ছে করে আমাদের হারানো হয়েছিল, আর এখন তাসকিন-সানিকেও গভীর ষড়যন্ত্র করে আমাদের টিম থেকে সরিয়ে আমাদের মাজা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হল,’ বলছিলেন জাহিদ আহসান রাসেল।

তবে বাংলাদেশের অনেক সমর্থক এটাও বিশ্বাস করেন, তাসকিন আহমেদের হাতে এম এস ধোনির কাটা মুণ্ডুর ছবি ভাইরাল করে দেওয়াটা ভাল রুচির পরিচয় হয়নি। এশিয়া কাপের সময় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবি নিয়েও তুমুল ঝগড়ায় মেতেছিলেন দু’দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা।

কিন্তু বেঙ্গালুরুতে আসা বাংলাদেশ সমর্থকরা দাবি করছিলেন ‘দু’চারজন উন্মাদের কারণে আপনি কিন্তু পুরো জাতিকে দোষ দিতে পারেন না।’

‘এখন উত্তেজনার বশে দু’চারজন দুষ্টু লোক যদি একটা বাজে ছবি ছড়িয়েও দিয়ে থাকে – তার ভিত্তিতে কিন্তু আপনি গোটা বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমকে বিচার করতে গেলে ভুল করবেন,’ পাশ থেকে যোগ করেন আরও একজন।

ভারতীয় সমর্থকরা এখন আর অতশত ব্যাখ্যা শুনতে রাজি নন – তাদের একটাই কথা, বাংলাদেশের বড্ড বাড় বেড়েছে – এবার একটা উচিত শিক্ষা দরকার।

‘আইসিসি তো আর এমনি এমনি র‌্যাঙ্কিং করে না – যাতে ভারত এক নম্বরে, আর বাংলাদেশ দশ! ওরা যেন সেটা মনে রেখে বুধবারে খেলতে নামে,’ বলছিলেন বেঙ্গালুরু প্রবাসী এক কলকাতার যুবক, যিনি ভারতকে জেতানোর বিরাট তোড়জোড় করে মাঠে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন!

ফলে বোঝাই যাচ্ছে – দিল্লি আর ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্ক যতই ভাল হোক – ভারত বাংলাদেশ ম্যাচ এখন আর ক্রিকেটের গণ্ডিতে আটকে থাকছে না, এই ম্যাচটাও এখন অন্যরকম মর্যাদার লড়াইতে পরিণত হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved priyoalo.com © 2023.
Site Customized By NewsTech.Com
x