সুমন মাহমুদঃ আমি যখন আর্টম্যান ক্রিয়েটিভ অ্যাকাডেমীতে ক্লাস করাতাম তখন একজন লুঙ্গী পড়া লোক আমার কাছে এসে বলে, “ভাই আমি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চাই।” আমি বললাম আপনি কি করেন, তিনি বলেন আমি রাস্তায় লুঙ্গি বিক্রয় করি। শুনেছি ফ্রিল্যান্সিং এ অনেক টাকা। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, বললাম ভাই আপনার লেখা পড়া কত দূর। সেই উত্তরে বলে এসএসসি দিতে পারিনি।
কিছুক্ষণ ভেবে বললাম- ঠিক আছে কাজ শিখতে চাইলে শিখুন। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং শিখাতে পারব না। সে একটু উচ্চ কণ্ঠে বলে ওঠে টাকা যত লাগে নিন। আমি জানি উলু বনে মুক্ত ছড়ায়ে লাভ নেই। মনে মনে ভাবলাম, গরিব লোকটার টাকা নষ্ট না করাটাই ভাল। আমি উত্তরে বললাম ভাই আমি ফ্রিল্যান্সিং শেখাই না, এটা শেখানো কোন জিনিস না, জ্ঞান থাকলে অবশ্যই ইন্টারনেট থেকে শেখা যায়। আর আমার কাছে কিছু সাইটের লিস্ট আছে, নিতে পারেন। উত্তরে তিনি বলেন- ওকে ভেবে দেখি শিখতে আসব কিনা।
ইংরেজি ভাষার জ্ঞান, কমুনিকেশন এবং কাজ না জেনে তারা ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চায়!! এ হচ্ছে আমাদের দেশের অবস্থা। আমার হুজুগে বিশ্বাসী। সবাই ফ্রিল্যান্সিং করছে বলে নিজেও ফ্রিল্যান্সিং করবে। যেকোন কাজের জন্য প্রয়োজন নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা, এটা কেউ কেউ উপলব্দি করতে পারে না। আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে টাকা কামিয়ে নিচ্ছে আমাদের আশ-পাশে থাকা অনুন্নত কিছু (কোচিং) ইনসটিউট। ফ্রিল্যান্সিং টা আগে দেখিয়ে, প্রশিক্ষণের নানা প্যাকেজে কাজ শেখানোর নাম নিয়ে কোর্সের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বছর খানেক আগে চারিদিকে খালি পোস্টার আর পোস্টার-ফ্রিল্যান্সিং ফ্রিল্যান্সিং শিখুন। যার ফলে আজ বিভিন্ন মার্কেট প্লেস থেকে আমাদের দেশের জন্য নতুন আইডি খোলার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যারা যোগ্য তাদের জন্য নতুন আইডি পাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ লেখা দেখলে তারা আমাদের অযোগ্য মনে করছে। অবশ্য এটার বড় কারণ হচ্ছে অযোগ্য লোকের ফ্রিল্যান্সিং শেখা।
কাজ না জেনে আমাদেরকে প্রেজেন্ট করছে। আমি তাদের দোষ দেবো না, দোষ তাদের যারা তাদের স্বপ্ন দেখিয়ে টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। তাদের জন্য আমাদের মার্কেট প্লেস নস্ট হচ্ছে।
তাই তাদের জন্য আমার আকুল আবেদন আগে নিজেরা মার্কেট প্লেস থেকে ইনকাম করুন, পড়ে জ্ঞান বিতরণ করুন। আর মনে রাখবেন যারা ভালো ইনকাম করে তারা কখনোই ট্রেনিং এর ব্যবসায় টাকা কামানোর চিন্তায় মশগুল থাকে না।
লেখকঃ
সুমন মাহমুদ, ফ্রিল্যান্সার এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট।