পঞ্চগড় প্রতিনিধি : দেশের সবচেয়ে বড় প্রত্ন এলাকা ভিতরগড় এর ইতিহাস মূল্য, গুরুত্ব সর্ব সাধারণের অনুধাবনের জন্য আজ পঞ্চগড় জেলায় ভিতরগড় প্রেমোশনাল সোসাইটি কর্তৃক ভিতরগড় দিবস ২০১৬ উদযাপিত হচ্ছে।
দিবসটি উদযাপনে যাবতীয় প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর ও বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ।
নান্দনিকতায় সজ্জিতকরণ সহ সত্যপীরের গান, নাগরদোলা ও নানাবিধ আয়োজনের সামগ্রীক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
গতকাল প্রেসক্লাব মিলানায়তনে প্রেস কনফারেন্সে ভিতরগড় দিবস ২০১৬ উদযাপনের বিভিন্ন তথ্য জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভিতরগড় প্রেমোশনাল সোসাইটি প্রেসিডেন্ট সোহেল চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্য সচিব ও সেক্রেটারি হাবিবুল্লাহ এন করিম এবং ‘ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস’ বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. শাহনাজ হুসনে জাহান লীনা।
পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পুর্বে সদর উপজেলার অমর খানা ইউনিয়নে এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই ভিতরগড় দুর্গ নগরীর অবস্থান। প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুর্গনগরীটির বিস্তৃত।
দেখলে অনায়াসেই মনে হবে এটি একটি দুর্গ নগরী। দেড় হাজার বছরের পুরনো সেই ইতিহাস। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে স্থাপিত ভিতরগড় দুর্গনগরী ছিল সার্বভৌম প্রশাসন। এটি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন নগরী। এতে বাণিজ্য ও জনবসতি দুটোই ছিল।
বিশেষত বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের অনুসারি লোকজন ছিল এ নগরীর বাসিন্দা। একই সঙ্গে এটি কেবল বহু অঞ্চলের বস্তুগত আদান-প্রদানই নয়, বরং বহুমুখি সংস্কৃতিরও মিলনকেন্দ্র ছিল। গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীণ বাণিজ্যপথের ওপর তৈরি এই দুর্গ নগরীর সঙ্গে তিব্বত, ভুটান, চীন, নেপাল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম বিহার ও পুন্ড্রবর্ধনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। সড়ক ও নদীপথে ছিল এই যোগাযোগ।
এই দূর্গ নগরী আবিস্কার করেন ‘ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস’ বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. শাহনাজ হুসনে জাহান লীনা। ওই এলাকার মাটি খুড়ে তিনি বের করেছেন বহু মূল্যবান প্রত্ন নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিস্কৃত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ও মন্দির। ভিতরগড়ের রাজবাড়ির পাশে কাচারি বলে পরিচিত উঁচু ঢিবি খননকালে এ মন্দিরটি আবিস্কৃত হয়। তবে এখন পর্যন্ত স্মৃতিসৌধ ও মন্দিরের অংশ বিশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় গোরস্থানের নীচের দিকে খননকাজ চালিয়ে একটি মন্দিরের ধবংসপ্রায় অবকাঠামো এবং মনুমেন্টের পশ্চিমে ইটের গাঁথুনির ১৬টি স্তম্ভ পাওয়া গেছে।
ড. লীনা বলেন, ‘নির্মাণ পদ্ধতি দেখে এগুলোকে গুপ্ত যুগের পরে সপ্তম শতক বা ১৪ শ বছর আগের তৈরি বলে অনুমান করা যায়। এ ছাড়া এসব স্থাপনা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বলেও আমাদের ধারণা।’
তিনি জানান, ২০০৭ সালে পঞ্চগড়ের ভিতরগড় এলাকায় প্রত্নতত্ত্ব জরিপ করেন। এরপর ২০০৮ সাল থেকে কয়েকদফা খনন কাজ করেন। সবশেষে তার প্রতিষ্ঠানের ৩৪ জন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় আবারো খনন করে ওই স্তুপ ও মন্দির আবিস্কার করেন।
তিনি জানান, ওই এলাকাটিকে স্বয়ং সম্পূর্ণ রাজ্য বলা যায়। এখানে প্রাচীন বসতি ছিল। এই রাজ্যের নিজস্ব রাজা প্রজা ছিল। ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র, ধর্মীয় ইমারত, দূর্গের দেয়াল। চারটি দেয়াল দিয়ে এই নগরীকে সুরক্ষিত করা হয়। এর মধ্যে বাইরের দুটি গড় বা দেয়াল মাটি দিয়ে তৈরি।
তার মতে, দেশে যেসব দুর্গনগরী চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ভিতরগড় দুর্গনগরীর বিস্তৃতি অনেক বেশি। এ কারণে একে দেশের সর্ববৃহৎ দুর্গনগরী বলা যেতে পারে। তিনি ভিতরগড়কে হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা দেবার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।