প্রিয়আলো প্রতিবেদকঃ মদিনা সনদে সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর অধিকার যেভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল, তার আলোকে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকার ‘নাস্তিকদের’ মদদ দিচ্ছে- হেফাজতে ইসলামের এই বক্তব্যের মধ্যে শনিবার এক সভায় শেখ হাসিনা মদিনা সনদের বিষয়টি তোলেন।
গণভবনে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ হবে রাজাকার, আল বদর ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ।
“যে দেশে সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা অর্জন করবে।”
“যেটা আমাদের প্রিয় নবী করিম (স.) তার মদীনা সনদ ও বিদায় হজে বলে গেছেন। ঠিক সেভাবেই এই দেশ চলবে।”
৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরতের পর সেখানে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি স্থাপনে হজরত মুহাম্মদ (স.) যে সংবিধান প্রণয়ন করেন, তাই ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিত।
মদিনা সনদে বলা হয়েছিল- মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদিসহ অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণের পর শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম।
তারা লংমার্চসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে। ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এক মন্ত্রী আলোচনা চালান।
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আলোচনাকে মৌলবাদীদের সঙ্গে সরকারের ‘আপস’ হিসেবে দেখছেন গণজাগরণ আন্দোলনের সংগঠকরা।
হেফাজত দাবি তোলার পর সরকার কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করছে গণজাগরণ মঞ্চ।
অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চের দাবির পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে, যার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে উস্কানি সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। হেফাজত আবার মাহমুদুরকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করছে।
যে কোনো ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কোনো ধর্মের অবমাননা বরদাশত করব না।
“নবী করিম (স.)কে কটূক্তি করলে আমরা মানব না। ব্যবস্থা নেবোই।”
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
হেফাজতের গত ৬ এপ্রিলের সমাবেশ থেকে বিরোধী দল সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিল বলে আওয়ামী লীগের দাবি।
কিন্তু তা না হওয়ায় বিরোধীদলীয় নেতা ‘নাখোশ’ হয়েছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “কেন তারা ঢাকায় থেকে ক্ষমতায় বসিয়ে গেল না। নাখোশ হয়ে উনি (খালেদা জিয়া) নেতাদের মোবাইল কেড়ে নিয়েছেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজতে ইসলাম তাদের নিজেদের কর্মসূচি পালন করেছে। তারা তাদের দাবি দিয়েছে, যে সব দাবি মানার তা মানা হবে।
হেফাজতের ১৩টি দাবির মধ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধের বিষয়টি রয়েছে, যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।