অর্থনৈতিক প্রতিবেদকঃবর্তমানে রাজনীতি দেশের বড় ব্যবসা বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে উত্তরণ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে উত্তরণ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন সিপিডির গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজেম।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের নিজেদের সংগঠনে প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনীতিতে সুশাসন থাকা দরকার। সেজন্য প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজনীতিও দরকার। স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বড় ভূমিকা থাকা উচিত। এজন্য উদ্যোক্তারা প্রস্তুত কি না-তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ব্যক্তির প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করছেন। এ কারণে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পান না। রাজনীতি এখন বড় ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সিপিডি এর সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনীতিতে সুশাসন থাকা দরকার। সেজন্য প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজনীতিও দরকার। ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনী হলফনামায় দেওয়া প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ঋণ খেলাপী ও কর ফাঁকিবাজদের তথ্যও জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
দেশের রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিক্যের কথা তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘নির্বাচনের ভিতরে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর যথেষ্ট দৃশ্যমান উপস্থিতি। রাজনীতিবিদদের চেয়েও হয়তো ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরও তুলনামূলকভাবে দৃশ্যমান উপস্থিতি। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরা এখন প্রয়োজন বোধ করছেন রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা তারা অনেক ক্ষেত্রে পেয়েছেন, সেটা একমাত্র রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য দ্বারাই সুরক্ষা করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘কর অবকাশ থেকে শুরু করে কোনো একটি লাইসেন্স বা নতুন একটি ব্যাংকের কথা বলেন এগুলো বিশেষভাবে আনুকূল্যের ভিত্তিতে হয়েছে। সেজন্য তারা রাজনীতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে এটাকে সুরক্ষা দিতে চায়।’
দেবপ্রিয় বলেন, নাগরিকরা কে রাজনীতিবিদ আর কে ব্যবসায়ী তা বুঝে উঠতে পারছে না। তাদের সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে বাংলাদেশে এখন রাজনীতি সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী উদ্যোগ। নির্বাচনের আগে যারা হলফনামা ঘোষণা দিচ্ছে, সে হলফনামাগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দ্রুততার সাথে দেখে এর একটি মূল্যায়ন জনগণের সামনে দেবেন, যেটা নির্বাচন কমিশন বিবেচনার ভেতরে নেবেন। নির্বাচনের পরে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিবেন তখনই তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ ঘোষণা দিয়ে নিবন্ধন করবেন।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্পন্নোত্ত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে অর্থনীতির কাঠামোগত রুপান্তরের দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রতিফলন থাকা উচিত। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হবো। উন্নয়ন রাষ্ট্র থেকে উদ্যোক্তা রাষ্ট্রে যেতে হবে। উদ্যোক্তা শ্রেণি সৃষ্টি করতে চাইলে সরকারের নীতিমালার সাহায্য লাগবে। নতুন উদ্যোক্তাদের লাইফ সাইকেল সাপোর্ট দিতে হবে। আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের বড় বাজার হবে। সেভাবে উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে হবে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সিপিডির ড. মোস্তাফিজুর রহমান।