প্রিয়আলো, ক্রীড়া ডেস্ক: ওমান-বাংলাদেশের ম্যাচকে ঘিরে ধর্মশালায় যে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে তা রূপকথার গল্পকেও হার মানাবে।
আইসিসির সহযোগী দেশ ওমান বাংলাদেশকে হারাবে এমনটাই বিশ্বাস ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। মন থেকে চেয়েছেন বাংলাদেশ যেন বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে না ওঠে! তাহলেই তো পুচকে ওমানের বিপক্ষে খেলতে হয় তাদের।
তা না হলে কী অশ্বিন এভাবে টুইট করে, ‘বাংলাদেশ-ওমানের ম্যাচ দেখার তর সইছে না। যদি বাংলাদেশ জিতে যায় তাহলে দেশের সবাই খুশি হবে। কিন্তু যদি ওমান জিতে যায়, পুরো বিশ্ব খুশি হবে।’
কী বুঝে অশ্বিন টুইট করেছেন তা তিনি নিজেই জানেন। অশ্বিনকে জবাব দেওয়ার জন্যে না হোক নিজেদের জন্য ম্যাচটি জেতা চাই বাংলাদেশের। কথাও রাখলো মাশরাফির দল। ওমানকে ৫৪ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপের সুপার টেনে উঠল বাংলাদেশ।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করে মাত্র ২ উইকেটে ১৮০ রান করে। যা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। জবাবে দুই বারের বৃষ্টিতে ১২ ওভারে ১২০ রানের নতুন টার্গেট পায় ওমান। পরের সে টার্গেটে উইকেটে ৬৫ রানের বেশি করতে পারেনি আইসিসির সহযোগী দেশটি।
দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল। ড্যাশিং ওপেনার একাই করেন ১০৩ রান। এ ইনিংস খেলার পথে তামিম একসঙ্গে দুটি মাইলফলক স্পর্শ করেন। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। পাশাপাশি প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তামিম।
একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটে হাজার রান পূর্ণ করেছেন তিনি। ৬০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর ৬৩ বলে ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। পুরো ইনিংসে ছিল ১০টি চার ও ৫টি ছয়ের মার।
শুরুতে তামিম-সৌম্য যোগ করেন মাত্র ৪২ রান। যেখানে সৌম্যর রান ১২। বাহাতি এ ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর সাব্বির-তামিমের ঝড় শুরু হয়। দুজন ৬৫ বলে যোগ করেন ৯৭ রান। তাদের দানবীয় ব্যাটিংয়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ওমানের বোলিং আক্রমণ। সাব্বির সুইপ শট করতে গিয়ে হাফ সেঞ্চুরির ছয় বল আগে বোল্ড আউট হলে গেলে তামিম ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। বন্ধু সাকিবকে নিয়ে তুলে নেন টি-টোয়েন্টির প্রথম সেঞ্চুরি। শূন্যে লাফ, হাথুরুসিংহকে দেখিয়ে সেঞ্চুরি উদযাপন করেন বাহাতি এ ওপেনার।
তামিমের সেঞ্চুরি ধর্মশালায় বসে দেখার সুযোগ হয়নি অশ্বিনের। কিন্তু টিভির পর্দায় দেখে ঠিকই টুইট করেন, ‘কী দারুণ একটি ইনিংস তামিমের। টেক আ বাও।’ বোধোদয় হল ভারতের অশ্বিনের। তামিমের সেঞ্চুরির পর হাত খুলে মেরে সাকিব ৯ বলে ১৭ রান করেন ২ চার ও ১ ছক্কায়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৮০ রান পায়। ওমানের হয়ে বল হাতে একটি করে উইকেট নেন অজয় লালতেচা ও খাওয়ার আহমেদ।
১৮১ রানের বড় টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে দ্বিতীয় বলে উইকেট হারায় ওমান। তাসকিনের বলে এলোমেলো ব্যাট চালিয়ে থার্ডম্যান অঞ্চলে বল উঠিয়ে দেন। ক্যাচটি ধরতে কোনো সমস্যাই হয়নি মাহমুদউল্লাহর।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় ওমান। সঙ্গে দুবারের বৃষ্টিতে তাদের রান রেটের লক্ষ্য আরও বেড়ে যায়। প্রথমবারের বৃষ্টিতে ১৬ ওভারে ১৫২ রানের টার্গেট পায় ওমান। পরেরবার লক্ষ্য নেমে আসে ২২ বলে ৭৫। ওভারপ্রতি ২৩ গড়ে রান তোলা কঠিন। বোলারদের দাপটে চেষ্টাও করেন নি তারা। ৫৪ রানে শেষ পর্যন্ত হার মানে ওমান।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব ১৫ রানে নেন ৪ উইকেট। যা তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। একটি করে উইকেট নেন তাসকিন, আল-আমিন, মাশরাফি ও সাব্বির।
‘এ’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে বাংলাদেশ। মূলপর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।