নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের অভিজাত খুলশি এলাকায় অবস্থিত পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মুন্নি আক্তার (২২) হত্যার নেপথ্যে একাধিক প্রেম, মনে করছে পুলিশ।
গত শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে সীতাকুন্ড ইকো পার্ক থেকে পুলিশ এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে । এর পর থেকেই পুলিশ এই হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করে যাচ্ছে।
আর এই রহস্য উন্মোচনে পুলিশের সামনে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।সেই সূত্র থেকেই একাধিক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে মুন্নি আক্তার খুন হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারনা করছে।
তবে পারিবারিক বিরোধ বা অন্য কোন কারণ আছে-কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অন্যদিকে লাশ উদ্ধারের প্রায় ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ হত্যাকারীর নাগাল পায়নি।
মুন্নি আক্তার হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সীতাকুন্ড মডেল থানার এস আই কামাল উদ্দিন একটি অনালাইন পোর্টালকে বলেন, ‘বাবা-মা, প্রতিবেশী, গ্রামের মানুষের কাছে অত্যন্ত শালিন ও ভদ্র স্বভাবের মেয়ে হিসেবেই পরিচিত ছিলো মুন্নি। কিন্তু তার খুনের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছি তার সাথে একাধিক তরুণের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রেম ঘটিত বিষয়ে প্রতিশোধ নিতে মুন্নিকে হত্যা করা হতে পারে বলে আমরা ধারনা করছি। এ ছাড়া মুন্নিদের গ্রামের বাড়িতে জায়গা-সম্পত্তি নিয়েও বিরোধ রয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি ।’
গত ১৩ মে শুক্রবার নগরীর পোর্ট সিটি ইন্টারনাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করতে এসে নিখোঁজ হয় পটিয়ার আবুল কালাম আজাদের মেয়ে মুন্নি আক্তার (২২)। পরদিন শনিবার দুপুরে নগরীর খুলশী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন মুন্নির মা হোসনে আরা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মুন্নির বন্ধু টিটুল, মারুফ, জ্যোতি ও প্রেমিক মাহবুব মাওলা।
ঐ দিন বিকেলে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের খাদ থেকে অজ্ঞাত নামা এক তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। এলোপাতাড়ি ছুরির আঘাতে হত্যা করা হয় এই তরুনীকে।
বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে সংবাদটি প্রচার হলে পরদিন রোববার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশটি মুন্নির বলে শনাক্ত করে তার পরিবার। নিহত মুন্নি নগরীর পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৩ মে শুক্রবার নগরীর মিয়াখান নগর এলাকার খালার বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় মুন্নি।সকাল নয়টার দিকে সহপাঠিদের সাথে এক সঙ্গে ক্লাসে ঢুকেন মুন্নি। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ক্লাস থেকে বের হয়ে দুপুর বারটা পর্যন্ত ইউনিভার্সিটর সামনেই বন্ধুদের সঙ্গে আডডা দেন। এই সময় মুন্নির সঙ্গে ছিল তার বর্তমান প্রেমিক একই ইউনিভার্সিটির ছাত্র মাহবুবুল মওলা।
মওলা জানান, সকাল সাড়ে দশটার দিকে মুন্নি আমাকে জানায়, সে তার বান্ধবীর সঙ্গে মেলাতে ঘুরতে যাবে। সে কারণে মুন্নিকে ভার্সিটিতে রেখেই আমি বাসায় চলে আসি। মুন্নি কোন মেলাতে যাবে বলেছে এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান মাওলা। তবে পোর্ট ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাওলা ও মুন্নি এক সাথেই ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়েছে।
বিষয়টি অস্বীকার করে মাহবুব মওলা বলেন, ‘আমি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় চলে আসছি। এদিকে নিখোঁজ ডায়েরি করতে খুলশি থানায় গিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছে নিহত মুন্নির প্রেমিক মাওলা ও তার বন্ধুরা।
জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক নুর উদ্দিন বলেন, ‘মুন্নির প্রেমিক মাওলা ও বন্ধুরা জানান, মুন্নির সাথে তাদের শেষ দেখা হয়েছিলো শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে।’
অন্যদিকে মাওলার সঙ্গে মুন্নির প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনেও তা অস্বীকার করেন মুন্নির মা হোসনে আরা। তিনি বলেন, ‘মাওলার সাথে মুন্নির কোনো সম্পর্ক ছিলোনা। আমার মেয়ে খুব শান্তিশিষ্ট ছিল-কারো সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিলোনা।’
তবে মুন্নির মা আরও জানান, শুক্রবার দুপুরে তিনজন ছেলে ও একজন মেয়ের সাথে মুন্নি ইকো পার্কে গিয়েছে বলে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তবে তারা কারা সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে ইউনিভার্সিটির বন্ধুরাই হত্যা করেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার বলেন, ‘মুন্নি হত্যাকাণ্ডটি একাধিক প্রেমঘটিত। কারা মুন্নিকে হত্যা করেছে এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে মাহবুব মাওলা ছাড়াও ৩ থেকে ৪ যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো মুন্নির। তাদের মধ্যে কেউ প্রতিশোধ নিতেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’
একাধিক জনের সাথে মুন্নির প্রেমের সম্পর্ক ছিলো জানিয়ে বর্তমান প্রেমিক মাহবুব মাওলা বলেন, ‘আমার আগে মুন্নির সাথে আরও কয়েকজনের সম্পর্ক ছিলো।’