জিয়া হকঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের ৫০তম সমাবর্তনে বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। অথচ তার বক্তব্যে মন নেই কারো। কমপক্ষে ৮০% ছাত্র-ছাত্রী সিট থেকে উঠে গেছে। যাচ্ছে। দুপুরের ভ্যাবসা গরমে অনুষ্ঠানের শ্রী কিছুটা ম্লান।
পেছনে দাঁড়িয়ে ভাবছি, সবাই উঠে গেলে কেমন হবে! আমার পাশের বন্ধুকে আগেই বলেছি, “রাষ্ট্রপতি বেশ মজা করবেন।” কিন্তু এখন দেখি বিধিবাম। নীরস সব কথা-বার্তা বলে চলছেন। তা-ও লিখিত বক্তব্য দেখে দেখে। ছাত্র-ছাত্রীরা যার যার মতো হাঁটছেন। গল্প করছেন। হটাৎ রাষ্ট্রপতি বলে উঠলেন, “দেখে দেখে আর বলব না। প্রায় শেষ আমার লেকচার। এখন কিছু মনের কথা কমু।”
দুই মিনিট যেতে না যেতেই তার জাদুতে আমরা সবাই শিকারী হয়ে গেলাম। গ্রাজুয়েট সবাই বসে গেছে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রাষ্ট্রপতির দিকে। তার কথা গিলছেন। পিনপতন নীরবতা ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। মোঃ আবদুল হামিদ বললেন, “আল্লাহর কী লীলাখেলা বুঝলাম না, যে ইউনিভার্সিটিতে আমি ভর্তি হতে পারলাম না, সেই ইউনিভার্সিটিতেই আমি চ্যান্সেলর হইয়া আসছি।”
তিনি বলেন, “১৯৬১ সালে আমি ম্যাট্রিক পাস করেছি, তাও থার্ড ডিভিশনে। আই এ পাস করেছি, এটাতোও এক সাবজেক্টে অর্থাৎ লজিকে রেফার্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসলাম। ভর্তি তো দূরের কথা, ফরমটা পর্যন্ত আমাকে দেয়া হলো না।”
অট্টহাসির রোলে ফেটে পড়ছে সমাবর্তন অুনষ্ঠান। রাষ্ট্রপতি হাসতে হাসতে বলেন, “এখন কেউ চিঠিও লেখে না। সব ওই এসএমএস। হারিয়ে গেছে চিঠিও। প্রেমপত্রও হারিয়ে গেল!”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “ভার্সিটির এমন কোনো হল নাই, যেখানে আমি রাত থাকি নাই। অবশ্য রোকেয়া হলে থাকি নাই। সুযোগ ছিল না। তবে রোকেয়া হলের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছি অনেক।”
বিয়ে নিয়ে মজা করে তিনি বলেন, “ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা দিয়াই, ইনশাল্লাহ বিয়ার কাম কইরা লাইছি। সবকিছুই সময়েরটা সময়ে ভালো। অসময়ে কোন কিছুই ভালো না। এমনকি মৌসুমি ফল। যেমন আমাদের এখানে বলে বারো মাইয়া কাঁঠাল। কিন্তু বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় মাসের কাঁঠাল যে মজা লাগে, আশ্বিন-কার্তিক ও মাস,অগ্রহায়ণ মাসের কাঁঠাল কিন্তু সে-ই মজা লাগে না। এটাও মনে রাখতে হবে।”
আমরা হাসতে হাসতে খুন। হাসছেন আমাদের মাননীয় চ্যান্সেলরও। পাশে এক সুন্দরী বলে উঠল, “কী জাদু দ্যাখাইলেন রাষ্ট্রপতি!”