ফরহাদুল ইসলামঃ তথ্য প্রযুক্তি এখন মানব জীবনের একটি আবিছেদ্য অংশ। বিশ্বায়নের কল্যাণে উন্নত দেশের খোঁজখবর ঘরে বসেই পাওয়া সম্ভব। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। তবে এই ক্ষেত্রে বাইরের বিশ্ব যেখানে অনেক অগ্রসর, বাংলাদেশ সেখানে অনেকটা পিছিয়ে আছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহারের কারনে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে অনেক সহজ এবং দ্রুততর। ফলশ্রুতিতে ব্যবসা-বানিজ্যের প্রচার ও প্রসার ঘটছে দ্রুত। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়েছে তারই পথ ধরে ই-কমার্স বা ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ইউরোপে ই-কমার্স ব্যবসার রমরমা অবস্থা। সেখানে ই-কমার্স অতি পরিচিত একটি শব্দ। মানুষ সেখানে সময়ের দাম বেশি দেয় বলে অনলাইনে সেরে নেয় প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। উন্নত বিশ্বে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে অপ্রতিহত গতিতে। ফলে সেখানকার অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে পড়েছে প্রযুক্তি নির্ভর। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইডেনের ই-কমার্স খাতের অবস্থা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো।
সুইডেন ই-কমার্স এখনো ক্রমশ বাড়ছে। সুইডেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয় ১৯৯৫ সালে । প্রায় ১০ মিলিয়ন লোকের দেশ সুইডেন ই- কমার্স ব্যবসায় প্রথম সারির দেশগুলোর একটি । সুইডেনের ৯৫ ভাগ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে । শুধুমাত্র ২০১৩ সালেই অনলাইনে ৪.১৭ বিলিয়ন ইউরো’র কেনাকাটা হয় । সুইডেনে ইকমার্সের ক্ষেত্রে আমাজনই রাজা। তবে এর বাইরে সুইডেন এর উল্লেখযোগ্য অনলাইন শপগুলোর মধ্যে IKEA, H&M অন্যতম ।
২০১৩ সালে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৮.৭ মিলিয়ন এবং তা ২০১৭ সালে ৯২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৬ সালে এসে সুইডেন ই-কমার্স ব্যবসায় অনলাইন কেনাকাটা ৬.২ বিলিয়ন ইউরো ছিল যা ২০১৫ সালে ছিল ৫.৩৬ বিলিয়ন । অর্থাৎ, চার বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ পরিমান অনলাইন বাজার তৈরি হয়েছে সুইডেনে ২০১৭ সালে । সুইডেনকে পঞ্চম বৃহত্তম অনলাইন বাজার বলা হয় বিশ্বে।
সুইডেনে এখন মোবাইল কমার্স দিন দিন দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ কি? । এ বিষয়ে খোঁজ খবর করলে জানা যায়, মানুষের কর্মমুখিতা। গত ১৩ বছরের ই-কমার্স ট্রেন্ড দেখলে বোঝা যায়, দেশটিতে ই-কমার্স বেড়েছে হুহু করে। ২০০৪ সালে দেশটিতে ই-কমার্সে কেনাকাটা হয়েছিলে ৬.৮ বিলিয়ন ক্রোনার যা ২০১৭ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৬৭ বিলিয়ন ক্রোনারে। চলতি বছর যা আরও ১০ বিলিয়ন বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বের দশটি দ্রুত ক্রমশ বর্ধমান ই-কমার্স ব্যবসার দেশের মধ্যে ইউরোপের পাঁচটি দেশ রয়েছে এবং সুইডেন তার মধ্যে একটি , অন্য দেশগুল হচ্ছে ইউকে , নরওয়ে , জার্মানি এবং নেদারল্যান্ড । সরাসরি দোকান থেকে কেনাকাটা এখন সুইডেনে ক্রমশ কমে যাচ্ছে এবং দিন দিন অনলাইন কেনাকাটার পরিমান খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ট্রেন্ড দেখলেই বোঝা যায় ।
২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে দ্রুত ক্রমশ বর্ধমান ১০ টি ই-কমার্স ব্যবসার দেশ হলো-
১। ইউএসএ
২। চীন
৩। জাপান
৪। দক্ষিণ কোরিয়া
৫ । ইউকে
৬। জার্মানি
৭। নেদারল্যান্ড
৮। নরওয়ে
৯। সিঙ্গাপুর
১০। সুইডেন
সুইডেনে প্রতি পাঁচজন ক্রেতার মধ্যে একজন ক্রেতা অনলাইনে গ্রোসারিস কেনাকাটা করেছে ২০১৫ সালে । কিন্তু অনলাইনে ২০১৬ সালে খাদ্য বিষয়ক প্রোডাক্ট বিক্রি আগের চেয়ে বেড়ে যায় । সুইডিশ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে সাধারণত খাদ্যদ্রব্য , শাক-সবজি ,ফল এসব প্রোডাক্টসমূহ মানুষ হাতে ধরে কিনতে চায় কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে এইসব প্রোডাক্ট বিক্রি ক্রমশ বেড়েছে ।
অনলাইনে সুপারমার্কেটগুলো এখন সুইডেনে বিক্রি শুরু করেছে । সুপারমার্কেট উইলিস এবং হেমকপ অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রি শুরু করেছে । “কুপোনেশন” এর জরিপে দেখা গেছে , গ্রোসারি বিক্রি এখন অনেক বেড়েছে ।
সুইডেন ই-কমার্স এ প্রতি চার জন অনলাইন ক্রেতার মধ্যে তিনজনের কাছেই প্রোডাক্ট ডেলেভারি অনেক গুরুত্ব বহন করে । ৪৬ ভাগ ক্রেতা কিভাবে প্রোডাক্ট তাদের কাছে ডেলেভারি হবে তা নিয়ে চিন্তা করে এবং সুইডেন এর প্রতি পাঁচজন ক্রেতার মধ্যে একজন ক্রেতা শুধুমাত্র প্রোডাক্ট এর ডেলেভারি কিভাবে হবে এই চিন্তা থেকে অনলাইনে কেনাকাটা করেনা ।
অনলাইন পেমেন্ট মেথড নিজেদের মতন তারা বেছে নেয় এবং ক্রেতার নিজেরা নিজেদের পছন্দ মতন জায়গা যেমন, অফিস , বাসা কিংবা অন্যকোন জায়গায় প্রোডাক্ট ইচ্ছে করলেই নিতে পারে ।
সুইডেনের ই-কমার্স কাস্টমারদের কাছে অনলাইন পেমেন্ট এখন বেশ জনপ্রিয় । সুইডেনের প্রায় ৫৪ ভাগ এর ওপর কাস্টমার পেমেন্ট করে কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে ।
সুইডেনের প্রতি তিনজনের একজন মনে করে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করা নিরাপদ । অর্ধেকের বেশি সুইডিশ মনে করে অনলাইনে কার্ড সিস্টেমে পেমেন্ট অনেক দ্রুত ও সহজ ।
সুইডেন ই-কমার্স ব্যবসার প্রতি তিনজন ক্রেতার একজন বিদেশী অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা করে । গ্লোবাল কুপনিং প্ল্যাটফর্ম “কুপোনেশন” এর এক জরিপে দেখা যায় এই বছরের প্রথম ছয় মাসের অবস্থান । আর তারা নিজেদের দেশের এই বছরের প্রথম ছয় মাসের জনপ্রিয় অনলাইন শপ এবং নিজেদের দেশে বিদেশী জনপ্রিয় অনলাইন শপের এক তালিকা করে ।
কুপোনেশন” এই জরিপ করে মূলত এই সাইটগুলোর এই বছরের প্রথম ছয় মাসের ভিজিটরের ওপর নির্ভর করে । অনলাইন শপের প্রতি সুইডেনের মানুষের কি পরিমান আগ্রহ বাড়ছে তা প্রকাশ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য ।
“E-commerce in the Nordics 2016“ এর তথ্য মতে , ৩২ ভাগ সুইডিশ অনলাইন কেনাকাটা করে মূলত যুক্তরাজ্য , যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি’র ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে ।
সিটিমেলা ডট কম এর সিইও মোস্তফা কামাল তোহা বলেন; “বাংলাদেশের ই-কমার্স সঠিক পথেই আছে। প্রধান সমস্যা হচ্ছে ইন্টারনেটের ধীরগতি এবং ডেলিভারি সিস্টেম। দক্ষিন অঞ্চলে সবচেয়ে কম অর্ডার সরবরাহ করা হয়, যার প্রধান কারন অসামঞ্জস্য যাতায়াত ব্যবস্থা”। ২০২২ সাল নাগাদ বাংলাদেশে বছরে ০৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার ই-বাণিজ্য হবে বলেও আশাবাদী তিনি।