1. imran.vusc@gmail.com : প্রিয়আলো ডেস্ক : প্রিয়আলো ডেস্ক
  2. m.editor.priyoalo@gmail.com : Farhadul Islam : Farhadul Islam
  3. priyoalo@gmail.com : প্রিয়আলো ডেস্ক :
  4. imran.vus@gmail.com : Sabana Akter : Sabana Akter
ইসলামে গীবত বা পরনিন্দাকারীর জন্য জান্নাতের দরজা বন্ধ - প্রিয় আলো
শিরোনাম

ইসলামে গীবত বা পরনিন্দাকারীর জন্য জান্নাতের দরজা বন্ধ

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
  • ২২৫
4

ইসলাম ডেস্কঃ

ইসলামে গীবত বা পরনিন্দা করাকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বলে ঘোষণা করে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত শোনাও অন্যায়। সুতরাং গীবত যে রকম পাপ, শ্রবণ করাও তেমনি পাপ। অথচ এই পাপের কাজটি চায়ের আসর থেকে শুরু করে স্বাভাবিক আলাপচারিতায় যেন স্বভাবসুলভ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, এখন তো কোনো বৈঠক গীবত ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়!

অনেকেই তো পরনিন্দাকে পাপ বা নিষিদ্ধ কোনো কিছু বলে মনেই করেন না। অথচ গীবত একটি জঘন্যতম পাপ। মদপান, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদি থেকেও মারাত্মক ও নিকৃষ্টতম। কেননা এসব পাপ তওবার দ্বারা ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু গীবতকারীর পাপ শুধু তওবা করলেই তা মাফ হবে না, বরং যার বিরুদ্ধে গীবত করা হয়েছে সে ব্যক্তি যদি মাফ করে তাহলেই আল্লাহর কাছে মাফ পাওয়া যাবে।

গীবত আরবি শব্দ। যার অর্থ পরনিন্দা। ইসলামের পরিভাষায় কারও অনুপস্থিতিতে তার কোনো দোষ-ত্রুটি অন্যের কাছে আলোচনা করাই গীবত। যদিও তার মধ্যে ওই দোষগুলো বিদ্যমান থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক সাহাবীর প্রশ্নের জবাবে বলেন- ‘গীবত হচ্ছে যা শুনলে তোমার ভাইয়ের খারাপ লাগবে, তা নিয়ে আলোচনা করার নামই গীবত।’ এতে ওই সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করেন, আমি যা বলছি তা যদি ওই ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবু কি তা গীবত হবে? তখন মহানবী (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘যদি তার মধ্যে ওই দোষগুলো থাকে তাহলেই তো গীবত হবে আর তা না থাকলে সেটা হবে তোহমত যার অর্থ অপবাদ।’

পবিত্র কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফে গীবত সম্পর্কে কঠোর ভাষায় হুশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে বারবার। মহান আল্লাহতায়ালা সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপের কাজ। তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে গীবত করো না।’

নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউই কারও গীবত করবে না। গীবত করলে তোমরা ধ্বংস হবে।’ মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা গীবত থেকে বেঁচে থাকো। কারণ তাতে তিনটি ক্ষতি রয়েছে-

১. গীবতকারীর দোয়া কবুল হয় না, ২. গীবতকারীর কোনো নেক আমল কবুল হয় না ও ৩. আমলনামায় তার পাপ বৃদ্ধি হতে থাকে।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি কারও দোষ বর্ণনা করতে ইচ্ছা করো তখন নিজের দোষের কথা স্মরণ করো। যদি নিজের দোষ না দেখে শুধু অন্যের দোষই বর্ণনা করতে থাকো তাহলে আখেরাতে আল্লাহও তোমার দোষ প্রকাশ করবেন।’

কোরআন ও হাদিসে গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যেভাবে মৃত ব্যক্তির গোশত কেটে ভক্ষণ করা হলে মৃত ব্যক্তির কোনো কষ্ট হয় না, তেমনি কারও গীবত করা হলে সে অনুপস্থিত থাকায় তারও কোনো কষ্ট হয় না। এভাবে মৃত ব্যক্তির গোশত ভক্ষণ অত্যন্ত খারাপ ও নিকৃষ্ট কাজ, যা মানুষের রুচি বিরুদ্ধ। ঠিক গীবতও এ রকম।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা গীবত করবে এরা ইহকালে যদিও ভালো ভালো নেক আমল করে, রোজা রাখে বা অন্যান্য ইবাদত করলেও এদের পুলসিরাত অতিক্রম করতে দেওয়া হবে না। বরং তাদেরও বলা হবে- তোমরা গীবতের কাফ্‌ফারা না দেওয়া পর্যন্ত সামনে এগুতে পারবে না।’

অথচ পুলসিরাত অতিক্রম না করে কারও পক্ষেই জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বোঝা গেল, গীবতকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

জাহান্নামে গীবতকারীদের দেহ থেকে গোশত ঝরে পড়বে। এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কঠিন শাস্তি ও দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে মানুষের নিন্দা করে থাকে।’ প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, আগুন যত দ্রুত শুষ্ক কাঠকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। গীবত তার চেয়েও অতি দ্রুত বান্দার নেক আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।’

গীবত বা পরচর্চা নামাজ-রোজা বাদ দেওয়ার চেয়েও নিকৃষ্টতম। গীবত বর্তমানে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েজ যেমন-

১. অত্যাচারী জালেম শাসকের সম্পর্কে গীবত করা যাবে।

২. কারও দোষ দূর করার জন্য গীবত করাতে কোনো অসুবিধা নেই।

৩. কোনো ব্যক্তিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য বা পাপ কাজ থেকে লজ্জা দেওয়ার জন্য গীবত করা যাবে।

৪. কাউকে কোনো ভালো শিক্ষা ও সৎ পথে আনার উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির গীবত করা যাবে।

৫. দ্বীন ইসলামের প্রতি উৎসাহী করার জন্য গীবত করাও বৈধ।

৬. কেউ যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে কারও কাছে পাত্র বা পাত্রীর সম্পর্কে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করে বা জানতে চায়। তাহলে নিয়ম হলো- দোষ-ত্রুটি থাকলে তা বলে দেওয়া। তা গীবত হবে না। কারণ ওই পাত্র বা পাত্রীর দোষ-ত্রুটি এখন না বললেও বিয়ের পরে যখন প্রকাশ পাবে তখন দাম্পত্য জীবনে অনেক ফেৎনা-ফ্যাসাদ ও ঝগড়া-বিবাদ হতে পারে।

আমাদের পুরোপুরি ধর্মীয় জ্ঞান না থাকার কারণে দৈনন্দিন কতই না পরনিন্দা করে যাচ্ছি। আর এ নিন্দার মাধ্যমে পরস্পরের দোষচর্চা হয়ে থাকে বলে তাকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়তই জন্ম নিচ্ছে হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, আর তা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ঝগড়া-বিবাদ, হানাহানিসহ বিভিন্ন ফেৎনা-ফ্যাসাদ। এর মাধ্যমে পরস্পরের আত্মবিশ্বাস ও সহমর্মিতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শত্রুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সমাজে, যার ফলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবন হয়ে ওঠে অশান্ত ও গ্লানিময়।

অতএব, আমাদেরসবার উচিত অন্যের দোষ-ত্রুটি অপরের কাছে আলোচনা না করে নিজের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করে তা সংশোধন করতে সচেষ্ট থাকা। তাহলে পরনিন্দা করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved priyoalo.com © 2023.
Site Customized By NewsTech.Com
x