মিউনিখ, ২০২৫।
ঠিক সেই শহর, যেখানে ১৯৯৩ সালে অলিম্পিক মার্সেই প্রথম ফরাসি ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছিল। দীর্ঘ ৩২ বছর পর আবারও মিউনিখে ফরাসি ফুটবলের ইতিহাস গড়ে উঠল। প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট ছিনিয়ে নিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি)। ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে তারা শুধু শিরোপা নয়, গড়েছে ইতিহাস।
মিউনিখে যখনই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল, সেবার নতুন কোনো দল চ্যাম্পিয়ন হয়, এ যেন অলিখিত এক নিয়ম। এবার সেই নিয়মেই পিএসজি নাম লেখাল নতুন বিজয়ী হিসেবে। একপেশে এক ম্যাচে ইন্টারকে বিধ্বস্ত করে পিএসজি তাদের ট্রফি ক্যাবিনেটে প্রথমবারের মতো যুক্ত করল ইউরোপের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা। একইসঙ্গে তারা নিশ্চিত করল মরসুমের ‘ট্রেবল’ জয়।
যেখানে লিওনেল মেসি, নেইমার ও এমবাপে একত্রে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেখানে ডেম্বেলে, হাকিমি, ভিতিনহা, কাভারাৎসখেলিয়া এবং সেনি মায়ুলুর মতো তরুণ ও গতিশীল খেলোয়াড়রা গড়ে তুললেন সাফল্যের মহাকাব্য। পুরো ম্যাচে ইন্টার প্রথম গোলের লক্ষ্যে শট নেয় ৭৪ মিনিটে, বিপরীতে পিএসজি তখন পর্যন্ত ৪ গোল তুলে নেয় দ্রুতগতির কাউন্টার অ্যাটাকে।
কোচ লুইস এনরিকের পরিকল্পনায় বল দখল ও ধারাবাহিক আক্রমণ ছিল পিএসজির কৌশলের মূল ভিত্তি। শুরুর ১৫ মিনিটেই তারা বল দখলে ছিল ৬৩ শতাংশের বেশি। প্রথম ১০ মিনিটেই দুইবার গোলের লক্ষ্যে শট নেয় ‘লা প্যারিসিয়ানরা’। এবং ১২ মিনিটেই আসে প্রথম গোল, ভিতিনহার দুর্দান্ত পাসে ডি-বক্সে বল পেয়ে গোল করেন হাকিমি, তার সাবেক ক্লাব ইন্টার মিলানের বিপক্ষে।
২০ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি আসে দুয়ের পা থেকে। ডেম্বেলের সঙ্গে বোঝাপড়ায় দুর্দান্ত আক্রমণ সাজিয়ে ফাঁকা জায়গা থেকে বল জালে পাঠান তিনি। ইন্টারের দুর্বল ম্যান-মার্কিং বারবার তাদের ভুগিয়েছে।
এরপর কিছু সেট পিস সুযোগ পেয়েও ইন্টার গোল আদায় করতে পারেনি। পিএসজিও প্রথমার্ধেই ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করলেও বিরতিতে যায় ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে।
দ্বিতীয়ার্ধে ইন্টার সমতা ফেরানোর চেষ্টায় উঠলেও পিএসজির শক্ত রক্ষণ দেয়ালে আটকে যায় তাদের সব প্রচেষ্টা। ৬৩ মিনিটে ডেম্বেলের ব্যাকহিল থেকে ভিতিনহার নিখুঁত পাসে আসে তৃতীয় গোল। ইয়ান সোমার কিছুই করতে পারেননি।
৭৩ মিনিটে আসে চতুর্থ গোল, আবারও ডেম্বেলের পাস থেকে এবার স্কোরশিটে নাম লেখান কাভিচা কাভারাৎসখেলিয়া।
৮১ মিনিটে ব্র্যাডলি বারকোলা একটি সহজ সুযোগ মিস করলেও, ৮৬ মিনিটে তাঁরই পাস থেকে সেনি মায়ুলুর গোল চূড়ান্ত করে দেয় পিএসজির ইতিহাস। ৫-০ গোলের জয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ইতিহাসে অন্যতম বড় ব্যবধানের জয়।
এই জয়ে শুধু একটি ট্রফি নয়, ইউরোপিয়ান ফুটবলে পিএসজির আধিপত্যের ঘোষণাও হয়ে গেল। এক সময় তারকা সমৃদ্ধ স্কোয়াড নিয়েও যারা ব্যর্থ ছিল, এবার তারা জয় ছিনিয়ে নিল একঝাঁক ক্ষুধার্ত তরুণ তারকাকে নিয়ে।
২০২৫ সাল তাই পিএসজির নামেই লেখা থাকবে।
ইউরোপের নতুন রাজার নাম প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন।