মোস্তফাবাপ্পীঃ ১৪ জুন জন্ম হয়েছিল বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টিনারের। এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের গ্রুপ ‘এ, বি, ও,এবি’। ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য।
২০১৮ সালে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ বার্তা- ‘ওয়ান আওয়ার, ওয়ান নিডল, ওয়ান লাইফ সেভড’।
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার আমূল ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে স্বেচ্ছা রক্তদান ব্যপক হারে বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ মানবিক ও পরোপকারী এমন সুনাম বিশ্ব পরিমণ্ডলে আরও বেগবান করেছে স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্রক্রিয়ায় রীতিমত ঝড় তোলা দেশের তরুণ সমাজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ‘রেড ক্রিসেন্ট’ এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোকে ছাড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রী ও যুবারা। TEAM FARHAD BLOOD DONATION GROUP; Volunteer Bangladesh; মুন্সিগঞ্জ ব্লাড ডোনেশন সোসাইটি(MBDS); কক্সবাজার ব্লাড ডোনার’স সোসাইটি; অন্বেষণ ব্লাড ডোনার’স সোসাইটি; ROOT BLOOD BANK; CTG BLOOD BANK; Police Blood Bank; Faiz Foundation Blood Donors; Blood Bengal সহ অনেক অনলাইন-অফলাইন ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠন গুলো স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তদানে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
রক্তদান, জীবন দান। কথাটার সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। অথচ রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা এখনও আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি সেভাবে। প্রতি দিন বিশ্বে রক্তের অভাবে বহু মানুষের প্রাণ গেলেও সুস্থ মানুষেরা অনেকেই রক্তদান সম্পর্কে ভুল ধারণা, ইতস্তত ভাব কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
তাই রক্ত দানে উপকারিতা, নিয়ম, মানবতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, ক্যাম্পেইন ও বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়ে কাজ করছে এ সংস্থাগুলো। অনেকক্ষেত্রে ফ্রি ব্লাড গ্রুফিং ক্যাম্পেইন; শর্ট ফিল্ম তৈরি, নাটিকা মঞ্চস্থ করা সহ নানাবিদ পরিকল্পনা নিয়ে নতুন নতুন রক্তদাতা সৃষ্টি করার জন্যেও কাজ করছে সংস্থা গুলো।
অনেকক্ষেত্রেই রক্ত দালাল, রক্তদানের কথা বলে ছিনতাই, সঠিক গ্রহীতার সন্ধান বা ধর্মীয় কুসংস্কারের স্বীকার হয়ে মানসিক, সামাজিক, আর্থিক, শারীরিক ইত্যাদি কষ্ট সহ রক্তদাতারা বিভিন্ন সমস্যার সন্মূখীন হয়ে থাকেন। এথেকে পরিত্রাণের জন্য স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের সচেতন থাকার পাশাপাশি সরকারকেও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে আহ্বান জানান রক্তদাতাদের সংগঠন নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তাগণ।
রক্তদানের ভয় কাটাতে জেনে নিন কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেনঃ
রক্তদানের আগে বেশি করে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন রেড মিট, মাছ, ডিম, বিনস, পালং শাক, কিসমিস ইত্যাদি। রক্ত দেওয়ার আগের রাতে ভাল করে ঘুমান। রক্তদানের আগে অন্তত ৫০০ মিলিলিটার পানি খান। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। ফ্যাটি খাবার যেমন ভাজা বা তৈলাক্ত খাবার, আইসক্রিম, ফুসকা এড়িয়ে চলুন। যদি আপনি শুধু অনুচক্রিকা দান করেন তা হলে মনে রাখবেন রক্তদানের অন্তত দু’দিন আগে থেকে আপনার শরীর সম্পূর্ণ অ্যাসপিরিন ফ্রি রাখতে হবে। অবশ্যই নিজের ডোনার কার্ড ও আইডেন্টিটি কার্ড সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।