প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে এবং বক্তব্যটি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। পরে মিছিল নিয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের একদল শিক্ষার্থী। এরপর দলে দলে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসছেন। সেখানে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মাইকে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে।
উপস্থিতি শিক্ষার্থীরা স্লোগানে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন ‘চেয়েছিলাম অধিকার-হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি নই আমি নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ ইত্যাদি।
রাজধানীর অন্য এলাকার সড়কেও তারা অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। এর আগে, আন্দোলনকারীদের নিয়ে ‘অপমানজনক’ বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা সোমবার দুপুরে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে।’ সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোটাবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। এ অসন্তোষের আগুনে ঘি ঢালে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ওপর হামলার ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলগেটে আটকে রাখা শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গিয়ে হামলার শিকার হন আসিফ মাহমুদ। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হল থেকে দলে দলে বেরিয়ে আসতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তপ্ত এ পরিস্থিতির ঢেউ লাগে দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হয়ে অবস্থান নেন রাজপথে। কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে বিভিন্ন ক্যাম্পাস।
কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা ‘অপমানজনক’ বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা আজ এই বিক্ষোভ করছেন। তারা গতকাল মধ্যরাতে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।
গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পর এ বিক্ষোভ দেখান তারা।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি হলো, সব গ্রেডে সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতিতে সংশোধন আনা।