নিয়োগকারীর কাছ থেকে ডামি ডিম্যান্ড লেটার ও পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ায় অভিবাসন ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
মালয়েশিয়া সরকার বর্তমান ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেয় কর্মী নেওয়ার জন্য। সিদ্ধান্ত ছিল, ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের পর নতুন করে আর কর্মীর চাহিদাপত্র ইস্যু করবে না তারা। এর আগে ইস্যু করা চাহিদা পত্রে ৩১ মে-এর পর বিদেশি কোন কর্মী সেদেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে সেই সিদ্ধান্তের পর অনেকেরই কাগজপত্র ঠিক থাকলেও শেষ মুহূর্তে বিমান ফ্লাইটের অভাবে টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারেনি রিক্রুটিং এজেন্সি। এছাড়া হজ্জ মৌসুম ও মে’ মাসের শেষের দিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিমান টিকেটের অভাবেই মূলত: অনেক কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যায়। তারপরও শুধুমাত্র বাংলাদেশ হতে মে’ মাসে গমন করেছে ৪৫,০৩১ জন কর্মী। অন্যদিকে অন্য সকল ১৪টি সোর্স কান্ট্রি হতে মে’ মাসে গমন করেছে মাত্র ৪৪,০৭৫ জন কর্মী।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায় গত ৩১ মে পর্যন্ত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটি থেকে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়ায় গেছেন। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার হিসাব মোতাবেক গেছে ৪,৭২,৪৭৬ জন কর্মী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগী বা নিয়োগকর্তা কর্তৃক পাওয়ার অফ এটর্নির মাধ্যমে নিয়োজিত এজেন্ট প্রথা বাদ দিয়ে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এজেন্সিসমূহকে কর্মী বাছাই সহ সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্নের দায়িত্ব দেওয়া হলে অন্তত ৬০ শতাংশ কমে যাবে। মালয়েশিয়ার সরকার তালিকাভুক্ত এজেন্সি গুলোর বিরুদ্ধে নানামুখী অপপ্রচার মালয়েশিয়ার নিকট তাদের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এতে নিয়োগকর্তাগণ অন্য সোর্স কান্ট্রি থেকে লোক নিতে আগ্রহী হয়।
বৈধ ও তালিকাভুক্ত এজেন্সির বিরুদ্ধে অযাচিত তদন্ত ও অপপ্রচারের কারণে নিয়োগকারী দেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা কর্মীদের অভিবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনশক্তি রপ্তানি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ভালো এজেন্সিগুলোকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করলে এই সেক্টরের অস্থিরতা কমবে এবং শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত হবে। এতে অভিবাসন ব্যয় কমবে এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের আগষ্ট হতে বর্তমান বছরের মে’ মাস পর্যন্ত ২২ মাসে পৌনে পাঁচ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভূমিকাপালনকারী জনশক্তি রপ্তানি খাতের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিবর্গকে আসন্ন বায়রা’র নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখার জন্য একটি গ্রুপ দীর্ঘদিন যাবত অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে পুরো জনশক্তি রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানি খাতকে অসাধু সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত করে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) নেতৃবৃন্দ। বায়রার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজ উল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যারা এই খাতকে ধ্বংস করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের স্বার্থে বৈধ ও তালিকাভুক্ত এজেন্সিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানিকে উৎসাহিত করা জরুরি।অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মালয়েশিয়া সরকারের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মসংস্থান এর সুযোগ গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ রুহুল আমিন ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় উপদেষ্টার সাথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।