বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে রবার্ট এফ কেনেডি, হিউম্যান রাইটসসহ আট আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
স্থানীয় সময় সোমবার (৬ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলন, বিক্ষোভে সহিংসতা ও গ্রেপ্তার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো হলো- অ্যান্টিডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল ফর টর্চার ভিক্টিমস, ওমেগা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, রেডড্রেস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার।
বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ, একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি ঢাকায় একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু নির্ধারিত তারিখের আগেই ১২০০ জনেরও বেশি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে তাদের বাসাবাড়িসহ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ২৮ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
গণমাধ্যমগুলোর রিপোর্টের বরাত দিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ২৮ অক্টোবর সমাবেশের সময় কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছিল। এতে অন্তত তিনজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে আছেন একজন পুলিশ সদস্য, একজন বিএনপি কর্মী ও রফিক ভূঁইয়া নামের একজন সাংবাদিক। ৩১ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ সম্পর্কিত সহিংসতায় অন্তত ১১ জন নিহত হন এবং শতাধিক মানুষ আহত হন।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ভিন্নমত দমনে চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বিক্ষোভকারীরা সহিংস আচরণ করেছে।
বলা হয়, বিক্ষোভ চলাকালীন প্রাণহানি এবং সহিংসতা নিয়ে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। বিক্ষোভ শেষে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালায়। এদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া বিএনপির ৫ শতাধিক সদস্য ও সমর্থককে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনগুলো।
আটক ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে পারেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলে, আমরা বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
এ সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও হুমকির চলমান চক্রের অবসানের পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারীভাবে গ্রেপ্তার হওয়া সকলের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক এই আট মানবাধিকার সংগঠন।