সারাদিন উৎসবমুখর পরিবেশে খুলনা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। ভোটে এবার প্রথমবারের মতো ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার হলেও ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন ভোটাররা।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুই সিটিতেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়। আর শেষ হয় বিকেল ৪টায়। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু করতে আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটকেন্দ্রগুলো রাখা হয় সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারিতে, যেখান থেকে সারাদিন পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, নির্বিঘ্নে ইভিএমে ভোট দিতে পেরে খুশি দুই সিটির বেশিরভাগ মানুষ। খুলনা সিটিতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো কিছু কেন্দ্রে ব্যবহার হয় ইভিএম। এবার নগরীর ২৮৯টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই ইভিএমে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। বয়স্কদের আঙুলের ছাপ না মেলাসহ কিছু সমস্যা হলেও তরুণরা ইভিএমে ভোট দিয়ে উচ্ছ্বসিত। জীবনের প্রথম ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন অনেকে।
খুলনা মহানগরীর পাইওনিয়ার বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে তরুণ ভোটার শোভন জানান, এবারই তিনি প্রথম ভোটার হয়েছেন। প্রথম ভোটটা ইভিএমে দিয়ে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
বরিশাল সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা খলিল জানান, ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়টি তার কাছে নতুন। তাই একটু সময় লেগেছে। তবে ভোট দিয়ে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন তিনি।
বরিশাল সরকারি কলেজ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আনোয়ার হোসেন দীপু জানান, কোনো কেন্দ্র বা বুথে ইভিএমে সমস্যা দেখা দিলেই দ্রুত তার সমাধান করা হয়েছে।
ইভিএমে ভোট হওয়ায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে, এমনটাই আশা করছেন ভোটাররা।
খুলনা সিটির ৩১টি ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২৮৯টি। মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন। আর সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে গতবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তালুকদার আব্দুল খালেক। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আ. আউয়াল, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান।
বরিশাল সিটিতেও বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। বরিশাল সিটির ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। এছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদের বিপরীতে ৪২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. ইকবাল হোসেন, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম। এছাড়াও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- হরিণ প্রতীকে মো. আলী হোসেন হাওলাদার, হাতি প্রতীকে মো. আসাদুজ্জামান এবং টেবিল ঘড়ি নিয়ে লড়ছেন মো. কামরুল আহসান।