মেলবোর্নের সেই সকালটা যেন এখনও স্মৃতিতে টাটকা। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে প্রথমবার ব্যাট হাতে নেমেছিলেন শুভমান গিল। তারপর থেকে চার বছর পেরিয়ে গেছে—গিল খেলেছেন ৩৪টি টেস্ট, প্রতিটি ইনিংসেই যেন খুঁজেছেন নিজেকে ভাঙা-গড়ার নতুন ঠিকানা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের আগ পর্যন্ত ৩২টি টেস্টে তার শতকের সংখ্যা ছিল পাঁচ। আগের ম্যাচেই করেছেন ক্যারিয়ারসেরা ১৪৭ রান। ক্রিকেটবিশ্ব বুঝেছিল, গিল এখন পিচে শুধু ব্যাট ঘোরাতে নয়, ইতিহাস গড়তে এসেছেন।
আর সেই ধারাবাহিকতায় বার্মিংহ্যামের সবুজ গালিচায় যেন তিনি আঁকলেন এক অনন্য চিত্রকল্প। ৩৪তম টেস্ট খেলতে নেমে গড়লেন নিজস্ব ব্যাটিং মহাকাব্য; কেবল শতকে থেমে না থেকে পৌঁছে গেলেন দ্বিশতকের সীমানায়। ৩১১ বলের ধৈর্যশীল অথচ ঝকঝকে ইনিংসে ২১টি চার আর ২টি ছক্কায় পূর্ণ করলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।
অধিনায়ক হিসেবে এটি তার দ্বিতীয় ম্যাচ। প্রথম ম্যাচেই করেছিলেন সেঞ্চুরি, এবার ডাবলের গৌরব। আর সেই সঙ্গে গড়লেন এক ঐতিহাসিক রেকর্ড— ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি! তার আগে ১৯৯০ সালে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন করেছিলেন সর্বোচ্চ ১৭৯ রান।
অধিনায়ক হিসেবে ভারতের জার্সিতে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির কৃতিত্ব যাদের আছে, গিল এখন সেই বিরল তালিকার ষষ্ঠ নাম। তার আগে ছিলেন— মনসুর আলি খান পতৌদি, সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকার, মাহেন্দ্র সিং ধোনি এবং বিরাট কোহলি। একেকজন কিংবদন্তি, একেকটা ইতিহাস, এবার সেই ঐতিহ্যের উত্তরসূরি হয়ে উঠলেন গিল।
ইংল্যান্ডের মাটিতেও এই কীর্তি বিরল। কেবল গাভাস্কার (২২১) ও দ্রাবিড় (২১৭) নাম লেখাতে পেরেছিলেন দ্বিশতকে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো আরেক সাহসী নাম শুভমান গিল।
বৃষ্টিভেজা উইকেট হোক বা সুইংয়ের হুমকি, তিনি ছিলেন অবিচল। যেন বলের সীমানা মুছে, একেকটি শটে তিনি লিখে যাচ্ছিলেন ক্রিকেটের এক নতুন কবিতা। এই ইনিংস শুধু পরিসংখ্যান নয়, এক সাহসিকতায় মোড়ানো অধ্যায়, যা মনে রাখবে ভারতীয় ক্রিকেট অনেকদিন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩৩৬ বলে ২৭টি চার ও ২ ছক্কায় ২৩১ রানে অপরাজিত আছেন গিল। তার ব্যাটে ভর করে ১২৯ ওভারে ৬ উইকেটে ৫১১ রান তুলেছে ভারত।