রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার কাটাসুর এলাকায় বাসার সামনে কামাল হোসেন (৩৫) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক শ্রমিকলীগ নেতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
গতকাল সোমবার (২৯ জুলাই) রাত ৯টায় মোহাম্মদপুরের কাটাসুর ৩ নম্বর রোডে তার বাসার সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা আলম চাঁন মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা হত্যার ঘটনায় সারাদিন অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে এক শ্রমিকলীগ নেতা রয়েছেন। গ্রেফতারকৃত শ্রমিকলীগ নেতার নাম তাজেল গাজী। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তরের মোহাম্মদপুর থানা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই শ্রমিকলীগ নেতা ছাড়াও হত্যার ঘটনায় আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার হওয়ার খবর জানা গেছে। তাদের নাম পরিচয় আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানাবেন তেজগাঁও বিভাগের বলে থানা পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নিহত কামাল হোসেন কাটাসুর এলাকার আলম চাঁনের ছেলে। তিনি সাবেক ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড বর্তমান ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এক সময় ছাত্রলীগ থেকে মূলদল আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করে ২০১৯ সালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও প্রচার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে পেশায় তিনি ইট-বালু ব্যবসয়ী। হত্যার দিন তিনি বাসার সামনে বসে লুডু খেলছিলেন। হঠাৎ করে মাস্ক পরিহিত চার থেকে পাঁচজন যুবক ধারাল অস্ত্র নিয়ে আচমকা কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে যান। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জাতীয় অর্থপেডিক পূর্ণবাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
নিহতের বাবা আলম চাঁন বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে এলাকায় কারো কোন বিরোধ নেই। আমার ছেলে রাজনীতি করলেও এখন সংসারের হাল ধরতে গিয়ে অনেকদিন যাবৎ রাজনীতি থেকে দূরে আছে। সে কোন পদ প্রত্যাশীও না যে, কারও সাথে তার রাজনৈতিক বিরোধ থাকবে। সে আমার ইট বালুর ব্যবসা দেখভাল করে ব্যবসার হাল ধরেছে। তাকে কি কারণে হত্যা করা হয়েছে সেটাই বুঝতে পারছি না। আমার ছেলে সব সময় মানুষের জন্য কাজ করতো। আমার এমন ভালো একটা ছেলেকে কারা মারলো বুঝতে পারছি না। পুলিশের কাছে আমার একটাই দাবি, তারা যেন তদন্ত করে আমার ছেলের হত্যাকারীদের বের করে।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বজনরা দাবি করেন, মোহাম্মদপুর এলাকার সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবের সাথে সখ্যতাই কাল হয়েছে কামালের জন্য। তবে, ঘটনার সাথে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা নেতার নাম স্পষ্ট বলতে চাইছেন না। চার ভাই বোনের মধ্যে নিহত কামাল হোসেন সবার বড়। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তিনি পরিবার নিয়ে কাটাসুর এলাকার তিন নম্বর রোড বাস করতেন।
কামালকে কুপিয়ে হত্যার সময় এক সিএনজি চালক আবুল হোসেন তার সঙ্গে বসে লুডু খেলতেছিলেন। তিনি জানান, হামলার সময়ে তারা কাটাসুর তিন নম্বর রোডে কামালের বাসার সামনে বসেই লুডু খেলছিলেন। হঠাৎ করে রাত ৯টার সময় কামালের বাসার সামনে চার পাঁচজন যুবক মাস্ক পড়ে ধারালো অস্ত্র হাতে দৌড়ে এসে তার ওপর হামলা করে কুপিয়ে গুরতর জখম করে। চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন আবুল। ওই সময় আমরা কয়েকজন উঠে ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাই। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘হত্যার ঘটনায় আমরা এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। এদের মধ্যে সূজন (২৫) নামের একজনকে আটকের পর তিনি আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। তার জবানবন্দীর ভিক্তিতে আমরা আরও কয়েকজনকে আটক করেছি। এদের মধ্যে তাজেল গাজী নামে শ্রমিকলীগ নেতা গ্রেফতার হতে পারে। তবে, এ বিষয়ে আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।’